সব ঠিক আছে বললেই সব ঠিক থাকে না: মানসিক স্বাস্থ্যের নীরব সংকট ও মুক্তির উপায়

 সব ঠিক আছে বললেই সব ঠিক থাকে না: একটি নীরব মানসিক সংকট এবং উত্তরণের পথ

"কেমন আছো?" - এই অতি সাধারণ প্রশ্নের উত্তরে আমাদের মুখ থেকে প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বেরিয়ে আসে, "ভালো আছি" বা "সব ঠিক আছে" কিন্তু আসলেই কি সব ঠিক থাকে? এই ছোট্ট কথাটি কি আমাদের ভেতরের ঝড়, চাপা কষ্ট বা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে আড়াল করার একটি সহজ উপায় মাত্র?

"সব ঠিক আছে বললেই সব ঠিক থাকে না" - এই কথাটি কেবল একটি প্রবাদ নয়, এটি আমাদের সময়ের এক গভীর মানসিক এবং সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে দুর্বলতা প্রকাশ করাকে অনেক সময় লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ফলে, আমরা আমাদের আসল অনুভূতিগুলোকে একটি মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখি এবং বাইরের পৃথিবীকে দেখাই যে আমরা ঠিক আছি।

সব ঠিক আছে বললেই সব ঠিক থাকে না: মানসিক স্বাস্থ্যের নীরব সংকট ও মুক্তির উপায়

এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই জটিল বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব। আমরা জানার চেষ্টা করব কেন আমরা এমনটা করি, এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব কী হতে পারে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে আমরা এই চক্র থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুস্থ সৎ জীবনযাপন করতে পারি।

সূচনা: "সব ঠিক আছে" নামক মায়াজাল

কল্পনা করুন, সারাদিনের অফিসের চাপ, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন আর ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা নিয়ে আপনি বিধ্বস্ত। আপনার ভেতরটা যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে। এমন সময় কোনো বন্ধু বা সহকর্মী জিজ্ঞেস করল, "সব ঠিকঠাক তো?" আপনি এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করলেন, কিন্তু পরক্ষণেই এক চিলতে মেকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, সব ঠিক আছে।"

এই দৃশ্যটি আমাদের প্রায় সকলেরই পরিচিত। এই একটি বাক্য দিয়ে আমরা আলোচনা এড়িয়ে যাই, সহানুভূতি থেকে নিজেদের দূরে রাখি এবং সাহায্যের দরজাটা নিজের হাতেই বন্ধ করে দিই। কিন্তু কেন? কেন আমরা আমাদের ভেতরের সত্যকে প্রকাশ করতে এত ভয় পাই?

এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের সামাজিক কাঠামো, ব্যক্তিগত মনস্তত্ত্ব এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষার গভীরে। চলুন, সেই কারণগুলো একে একে উন্মোচন করা যাক।

প্রথম অধ্যায়: কেন আমরা বলি "সব ঠিক আছে"? মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণ

এই আপাতসরল কথাটির পেছনে অনেক জটিল কারণ কাজ করে। এটি কেবল একটি অভ্যাস নয়, বরং একটি আত্মরক্ষার কৌশলও বটে।

. সামাজিক চাপ এবং বিচার-বিশ্লেষণের ভয়:

সমাজ প্রায়শই শক্তিশালী, সফল এবং সুখী মানুষদের কদর করে। নিজের কষ্ট, ব্যর্থতা বা মানসিক দুর্বলতার কথা বললে অন্যরা আমাদের নিয়ে কী ভাববে, আমাদের কি 'দুর্বল' বা 'ব্যর্থ' হিসেবে চিহ্নিত করবে? - এই ভয় আমাদের চেপে ধরে। আমরা চাই না别人রা আমাদের করুণা করুক বা আমাদের সমস্যা নিয়ে কানাঘুষা করুক। তাই, নিজেদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে আমরা "সব ঠিক আছে" নামক বর্মটি পরিধান করি।

. অন্যদের উপর বোঝা হতে না চাওয়ার মানসিকতা:

আমরা অনেকেই মনে করি যে আমাদের সমস্যা দিয়ে অন্যকে ভারাক্রান্ত করা উচিত নয়। প্রত্যেকেই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত এবং সমস্যা জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে নিজের কষ্টগুলো অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা স্বার্থপরতা বলে মনে হতে পারে। এই ভাবনা থেকে আমরা নিজেদের গুটিয়ে নিই এবং সব একাই সামলানোর চেষ্টা করি, যা আদতে আমাদের আরও একাকী করে তোলে।

. আত্মরক্ষার কৌশল (Defense Mechanism):

মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, এটি এক ধরনের 'ডিনায়াল' বা অস্বীকার। যখন কোনো সমস্যা বা অনুভূতি আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়, তখন মস্তিষ্ক সেই কষ্ট থেকে বাঁচতে সেটিকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। "সব ঠিক আছে" বলাটা সেই অস্বীকারেরই একটি বহিঃপ্রকাশ। আমরা নিজেদেরকে এবং অন্যদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে কোনো সমস্যাই নেই, যদিও বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো।

. দুর্বলতাকে লজ্জার বিষয় ভাবা:

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, বিশেষ করে পুরুষদের উপর 'শক্তিশালী' থাকার একটি অলিখিত চাপ থাকে। "ছেলেরা কাঁদে না" - এই ধরনের কথা শুনতে শুনতে বড় হওয়ায় অনেক পুরুষই তাদের আবেগ প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন। তারা মনে করেন, কষ্ট বা উদ্বেগের কথা বলাটা পৌরুষের পরিপন্থী। নারীদের ক্ষেত্রেও নিজের প্রয়োজনকে অবহেলা করে পরিবারের সবার খেয়াল রাখার একটি সাংস্কৃতিক চাপ বিদ্যমান থাকে, যা তাদের নিজের অনুভূতির কথা বলতে বাধা দেয়।

. সমস্যা সমাধানের পথের অনিশ্চয়তা:

অনেক সময় আমরা সমস্যার কথা স্বীকার করতে চাই না কারণ আমরা জানি না এর সমাধান কীভাবে হবে। যদি মুখ ফুটে সমস্যার কথা বলেও কোনো সমাধান না পাওয়া যায়, তবে তা আরও বেশি হতাশার কারণ হতে পারে। এই ভয় থেকেও আমরা সমস্যাটিকে আড়াল করে রাখি, এই আশায় যে হয়তো সময়ের সাথে সাথে এটি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় অধ্যায়: "সব ঠিক আছে" বলার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব

সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এই কথাটি কার্যকর মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

. মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিধ্বংসী প্রভাব:

যখন আমরা ক্রমাগত আমাদের অনুভূতিগুলোকে দমন করি, তখন সেগুলো হারিয়ে যায় না, বরং ভেতরে জমা হতে থাকে। এই চাপা কষ্ট, রাগ বা উদ্বেগ পরবর্তীতে আরও ভয়ংকর রূপে প্রকাশ পায়।

  • বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ (Anxiety and Depression): অনুভূতি চেপে রাখার অন্যতম প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ। যখন ভেতরের চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখন তা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারের রূপ নিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, বিষণ্ণতা বিশ্বব্যাপী অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য
  • একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা: ক্রমাগত নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখার ফলে আমরা অন্যদের থেকে মানসিকভাবে দূরে সরে যাই। আমরা মনে করতে শুরু করি যে কেউ আমাদের বোঝে না, যা একাকীত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
  • মানসিক বিস্ফোরণ (Emotional Outbursts): দীর্ঘ সময় ধরে আবেগ চাপা থাকলে তা হঠাৎ করে সামান্য কারণে তীব্র রাগ, কান্না বা হতাশার আকারে বেরিয়ে আসতে পারে, যা আমাদের সম্পর্কগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

. শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব:

মন এবং শরীরের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ রয়েছে। মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ সরাসরি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

  • স্ট্রেস-সম্পর্কিত রোগ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আমাদের শরীরে কর্টিসল (Cortisol) নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। মায়ো ক্লিনিক এর স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক আর্টিকেল
  • সাইকোসোম্যাটিক লক্ষণ: অনেক সময় মানসিক কষ্টের কোনো শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও শরীর বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে তার জানান দেয়, যেমন - বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি।

. সম্পর্কের উপর ছায়াপাত:

যে কোনো সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি হলো সততা, বিশ্বাস এবং খোলাখুলি যোগাযোগ। যখন আমরা আমাদের সঙ্গীর কাছে "সব ঠিক আছে" বলে আসল অনুভূতি লুকিয়ে রাখি, তখন সম্পর্কের গভীরে ফাটল ধরে।

  • আস্থার অভাব: সঙ্গী বা প্রিয়জন যখন বুঝতে পারে যে আপনি তাদের কাছে সৎ নন, তখন তাদের মনে হতে পারে আপনি তাদের বিশ্বাস করেন না। এটি সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।
  • যোগাযোগের অভাব: সমস্যার কথা আলোচনা না করলে তা সমাধান করা অসম্ভব। ফলে, ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি সময়ের সাথে সাথে বড় আকার ধারণ করে এবং সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তোলে।
  • একতরফা সম্পর্ক: আপনি যদি সবসময় নিজের কষ্ট লুকিয়ে রাখেন, তাহলে আপনার সঙ্গী আপনার প্রয়োজনগুলো বুঝতে পারবেন না। এতে সম্পর্কটি একতরফা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তৃতীয় অধ্যায়: এই চক্র ভাঙার উপায় - কীভাবে সৎ এবং সুস্থ থাকবেন?

"সব ঠিক আছে" বলার অভ্যাসটি ত্যাগ করা রাতারাতি সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সচেতন প্রচেষ্টা, সাহস এবং অনুশীলন। নিচে কিছু কার্যকরী উপায় আলোচনা করা হলো যা আপনাকে এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।

. আত্ম-সচেতনতা (Self-Awareness) বাড়ানো:

প্রথম ধাপ হলো নিজের অনুভূতিগুলোকে চেনা এবং স্বীকার করা। আপনি ঠিক কী অনুভব করছেন - দুঃখ, রাগ, ভয়, নাকি হতাশা?

  • জার্নালিং: প্রতিদিন নিজের অনুভূতিগুলো একটি ডায়েরিতে লিখুন। কোনো বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই যা মনে আসে, তাই লিখুন। এটি আপনাকে আপনার ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।
  • মাইন্ডফুলনেস বা ধ্যান: প্রতিদিন কয়েক মিনিট সময় নিয়ে শান্ত হয়ে বসুন এবং নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দিন। এটি আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে থাকতে এবং আপনার আবেগগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করবে।

. নিজের অনুভূতিকে বৈধতা দিন (Validate Your Feelings):

নিজেকে বলুন, "আমার কষ্ট পাওয়ার অধিকার আছে" বা "আমার উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক" 'খারাপ' বা 'নেতিবাচক' অনুভূতি বলে কিছু নেই; প্রতিটি অনুভূতিই কোনো না কোনো বার্তা বহন করে। নিজের অনুভূতিকে সম্মান করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এটা মেনে নিন যেসব সময় ঠিক না থাকাটাও ঠিক আছে (It's okay not to be okay)

. সঠিক মানুষ এবং সঠিক সময় নির্বাচন করুন:

আপনার সব কথা সবাইকে বলার প্রয়োজন নেই। এমন একজন বা দুজন বিশ্বস্ত বন্ধু, সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যকে বেছে নিন যাদের কাছে আপনি মন খুলে কথা বলতে পারেন। এমন সময় কথা বলুন যখন আপনারা দুজনেই শান্ত এবং মনোযোগী থাকতে পারবেন।

. যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করুন:

সরাসরি "আমি ভালো নেই" বলাটা কঠিন মনে হতে পারে। তাই ছোট ছোট পদক্ষেপে শুরু করুন।

  • "আমি" বাক্য ব্যবহার করুন: "তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ" এর পরিবর্তে বলুন "তোমার এই কথায় আমি কষ্ট পেয়েছি" এটি অভিযোগের সুর কমিয়ে আপনার অনুভূতিকে প্রকাশ করে।
  • ধীরে ধীরে প্রকাশ করুন: শুরুতেই সব বলে ফেলার দরকার নেই। বলতে পারেন, "আজ আমার মনটা একটু খারাপ" বা "আমি একটু চিন্তায় আছি" এটি আলোচনার দরজা খুলে দেবে।

. পেশাদার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না:

যদি আপনার অনুভূতিগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে, তবে একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একজন পেশাদার আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলো বুঝতে, তার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে এবং সেগুলো মোকাবিলা করার স্বাস্থ্যকর উপায় শিখতে সাহায্য করতে পারেন। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সাহায্য চাওয়া শারীরিক অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতোই স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। বাংলাদেশের কান পেতে রই মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা হেল্পলাইন

চতুর্থ অধ্যায়: যখন অন্য কেউ বলে "সব ঠিক আছে"

শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয়, যখন আমাদের প্রিয় কোনো মানুষ এই কথাটি বলেন, তখন আমাদেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।

. কথাটি সরলভাবে গ্রহণ না করা:

যদি আপনার মনে হয় আপনার বন্ধু বা প্রিয়জন ভালো নেই, তবে তার "সব ঠিক আছে" কথাটি শুনেই থেমে যাবেন না। সহানুভূতি নিয়ে আরও একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

. একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন:

তাকে বোঝান যে আপনি তার পাশে আছেন এবং কোনো বিচার ছাড়াই তার কথা শুনবেন। আপনি বলতে পারেন, "তোমাকে একটু চিন্তিত লাগছে। যদি কিছু শেয়ার করতে চাও, আমি শোনার জন্য আছি।"

. খোলা প্রশ্ন করুন (Open-ended Questions):

"হ্যাঁ/না" দিয়ে উত্তর দেওয়া যায় এমন প্রশ্নের বদলে খোলা প্রশ্ন করুন। যেমন, "তোমার দিনটা কেমন গেল?" এর পরিবর্তে জিজ্ঞেস করতে পারেন, "আজ অফিসে কী কী হলো?"

. ধৈর্য ধরুন:

কাউকে কথা বলার জন্য জোর করবেন না। হয়তো তিনি সেই মুহূর্তে প্রস্তুত নন। তাকে সময় দিন এবং আপনার সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে রাখুন। আপনার ধৈর্য এবং সহানুভূতিই হয়তো তাকে মন খুলতে উৎসাহিত করবে।

উপসংহার

"সব ঠিক আছে" - এই দুটি শব্দ একটি আরামদায়ক মিথ্যা, যা আমাদের সাময়িক স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে আমাদের একাকীত্বের অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সব ঠিক আছে বললেই যেমন সব ঠিক হয়ে যায় না, তেমনি সমস্যার কথা স্বীকার করলেই যে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান হয়ে যাবে, এমনও নয়।

তবে, সত্যকে স্বীকার করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুক্তির প্রথম ধাপ। নিজের অনুভূতিকে সম্মান করা, বিশ্বস্ত মানুষের সাথে তা ভাগ করে নেওয়া এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য চাওয়া দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং এটি অসীম সাহসের পরিচায়ক।

প্রকৃত শক্তি সবকিছু নিখুঁতভাবে সামলে নেওয়ার মধ্যে নয়, বরং অপূর্ণতা এবং দুর্বলতাকে আলিঙ্গন করে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই নিহিত। আসুন, আমরা "সব ঠিক আছে" এর মুখোশ খুলে ফেলি এবং নিজেদের অন্যদের প্রতি আরও বেশি সৎ, সহানুভূতিশীল এবং মানবিক হয়ে উঠি। কারণ দিন শেষে, ভেঙে পড়ার পর পুনরায় নিজেকে গড়ে তোলার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা।


প্রশ্ন-উত্তর (FAQ) সেকশন

প্রশ্ন : সব সময় কি "সব ঠিক আছে" বলা খারাপ?
উত্তর: না, সব সময় নয়। একজন অপরিচিত ব্যক্তি বা সাধারণ পরিচিত কেউ কুশল জিজ্ঞেস করলে সংক্ষিপ্ত এবং ভদ্র জবাবে "সব ঠিক আছে" বলাটা স্বাভাবিক সামাজিক আচরণ। সমস্যা তখন হয় যখন আমরা আমাদের নিকটতম এবং বিশ্বস্ত মানুষদের কাছেও ক্রমাগত আমাদের আসল অনুভূতি লুকিয়ে রাখি এবং একাই কষ্ট পেতে থাকি।

প্রশ্ন : আমার কথা বলার মতো বিশ্বস্ত কেউ না থাকলে কী করব?
উত্তর: এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি, তবে উপায় আছে। প্রথমত, জার্নালিং বা লেখালেখি আপনার আবেগ প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন অনলাইন কমিউনিটি বা সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিতে পারেন যেখানে আপনি আপনার মতো মানুষদের সাথে বেনামে কথা বলতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একজন পেশাদার কাউন্সেলর বা থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া। তারা আপনাকে একটি নিরাপদ এবং গোপনীয় জায়গা দেবেন আপনার কথা শোনার জন্য।

প্রশ্ন : আমি যদি আমার সমস্যার কথা বলি এবং অন্যরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, তখন কী হবে?
উত্তর: এই ভয়টা খুবই স্বাভাবিক। इसीलिए সঠিক মানুষ নির্বাচন করা খুব জরুরি। যদি কেউ আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেয় বা আপনাকে নিয়ে উপহাস করে, তবে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি আপনার বিশ্বাস বা বন্ধুত্বের যোগ্য নয়। এমন নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন, যারা সত্যি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, তারা আপনার কষ্টের সময় আপনার পাশে থাকবে, আপনাকে বিচার করবে না।

প্রশ্ন : কর্মক্ষেত্রে কি নিজের মানসিক কষ্টের কথা বলা উচিত?
উত্তর: কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের উপর এটি অনেকাংশে নির্ভরশীল। যদি আপনার ম্যানেজার বা এইচআর বিভাগ সহায়ক হয়, তবে আপনি আপনার মানসিক চাপের কথা জানাতে পারেন। এতে হয়তো আপনার কাজের চাপ কমানো বা অন্য কোনো উপায়ে আপনাকে সাহায্য করা সম্ভব হতে পারে। তবে, সব কর্মক্ষেত্র একরকম নয়। যদি আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, তবে সরাসরি বলার পরিবর্তে ছুটি নিতে পারেন বা পেশাদার সাহায্য নিয়ে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল শিখতে পারেন যা আপনাকে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।


👉 🙏🙏 লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅ আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 

Next Post Previous Post