ফিটনেস বিগিনারদের জন্য ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ – ঘরে বসেই সুস্থ ও ফিট থাকুন
ফিটনেসের দুনিয়ায় পা রাখার ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই বুঝতে পারেন না কোথা থেকে শুরু করবেন। আপনি যদি একজন নতুন ব্যক্তি হয়ে থাকেন, যিনি ফিটনেস নিয়ে ভাবছেন, তবে এই ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জটি হতে পারে আপনার নতুন যাত্রার শুরু। এই পরিকল্পনাটি শুধুমাত্র ওয়ার্কআউট নয়, বরং পুরো জীবনযাত্রার পরিবর্তনের একটি রোডম্যাপ।
এই ব্লগটি আপনার জন্য সাজানো হয়েছে
ধাপে ধাপে পরিকল্পিত একটি
চ্যালেঞ্জ যা আপনাকে ফিটনেস
রুটিনে অভ্যস্ত করে তুলবে। আপনি
যদি প্রতিদিন এই গাইড অনুসরণ
করেন, তবে মাসের শেষে
নিজের মধ্যে চমৎকার পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
চ্যালেঞ্জ
শুরু করার পূর্ব প্রস্তুতি
ফিটনেস
যাত্রার শুরুতেই আমাদের প্রয়োজন কিছু প্রস্তুতির। কারণ
ছাড়া শুরু করলে মাঝপথে
হারিয়ে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা।
এই ধাপে আমরা জানব
কীভাবে নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত
করবেন।
শারীরিক
অবস্থা মূল্যায়ন
ফিটনেস
শুরু করার আগে নিজের
বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা জরুরি। আপনি
ওভারওয়েট, আন্ডারওয়েট বা আদর্শ ওজনের
মধ্যে রয়েছেন কিনা তা জানার
জন্য BMI (Body Mass
Index) বের করুন। এর পাশাপাশি ব্লাড
প্রেসার, সুগার, হার্টবিট এসবও জানাটা দরকার।
নিজের মেডিকেল রিপোর্ট হাতে রাখা জরুরি
যাতে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়।
একটি
সাধারণ ফিটনেস ডায়েরিতে আপনার উচ্চতা, ওজন, কোমর, বুক,
থাইয়ের পরিমাপ লিখে রাখুন। মাসের
শেষে সেই ডেটার সঙ্গে
তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন আপনি কতটা উন্নতি
করেছেন।
লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ
কোনো
কিছু অর্জন করতে হলে দরকার
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। "আমি ফিট হতে
চাই" — এটি একটি অস্পষ্ট
টার্গেট। বরং বলুন, "আমি
৩০ দিনে ৩ কেজি
ওজন কমাতে চাই" বা "প্রতিদিন ২০ মিনিট ব্যায়াম
করব।"
এভাবে
SMART Goal (Specific, Measurable, Achievable, Relevant, Time-bound) সেট করুন। লক্ষ্য
বাস্তবসম্মত না হলে তা
আপনাকে ডিমোটিভেট করতে পারে। আপনি
যদি শুরুতেই বিশাল লক্ষ্য রাখেন, সেটা না পূরণ
হলে হতাশা গ্রাস করতে পারে।
সঠিক
ডায়েট পরিকল্পনা
শুধুমাত্র
ব্যায়াম করলেই ফিট হওয়া যায়
না, সাথে দরকার সঠিক
পুষ্টি। অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন না
খেলে ওজন কমে যাবে।
আসলে, না খাওয়া মানে
শরীরের ক্ষতি। বরং প্রয়োজন প্রোটিনসমৃদ্ধ
ও সুষম খাদ্য।
আপনার
খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি, ফলমূল, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং হেলদি ফ্যাট
রাখুন। আপনি চাইলে Harvard’s Healthy Eating Plate অনুসরণ
করতে পারেন যা খুব সহজভাবে
সুষম খাদ্যের গাইড দেয়।
ফিটনেস
চ্যালেঞ্জ প্ল্যান: সপ্তাহভিত্তিক পরিকল্পনা
এখন
আসি মূল চ্যালেঞ্জের দিকে।
৩০ দিনকে আমরা ৪টি সপ্তাহে
ভাগ করেছি এবং প্রতিটি সপ্তাহের
আলাদা লক্ষ্য রয়েছে।
প্রথম
সপ্তাহ: শরীর গরম ও বেসিক স্ট্রেচিং
নতুনদের
জন্য প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে জরুরি হলো শরীরকে অভ্যস্ত
করে তোলা। তাই হালকা ওয়ার্ম-আপ ও স্ট্রেচিং
দিয়ে শুরু করা শ্রেয়।
প্রতিদিনের
রুটিন হতে পারে:
·
৫
মিনিট হাঁটা বা হালকা জগিং
·
১০
মিনিট স্ট্রেচিং (হ্যামস্ট্রিং, ব্যাক, আর্মস, নেক)
·
৫
মিনিট বডি ওয়েট স্কোয়াট
·
২
মিনিট প্ল্যাঙ্ক
প্রথম
কয়েকদিন আপনার শরীরে ব্যথা হতে পারে, সেটা
স্বাভাবিক। তবে সেটা নিরবিচারে
বিশ্রামের অজুহাত হওয়া উচিত নয়। এই
পর্যায়ে লক্ষ্য হলো শরীরের প্রতিটি
অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অ্যাক্টিভ করা।
দ্বিতীয়
সপ্তাহ: কার্ডিও এবং হালকা ব্যায়াম
দ্বিতীয়
সপ্তাহে আপনার শরীর কিছুটা প্রস্তুত
হয়ে যাবে। এবার আসুন কার্ডিওতে।
এটি হার্ট রেট বাড়িয়ে ফ্যাট
বার্ন করতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয়
সপ্তাহের রুটিন:
·
১০
মিনিট স্কিপিং বা জাম্পিং জ্যাকস
·
১৫
মিনিট ফাস্ট হাঁটা বা সাইক্লিং
·
১০
মিনিট ব্যাডমিন্টন বা হালকা স্পোর্টস
·
৫
মিনিট শীতল করার জন্য
স্ট্রেচিং
এই সপ্তাহে যদি প্রতিদিন অন্তত
৩০ মিনিট ব্যায়াম করেন, তবে আপনার শক্তি
ও ধৈর্য বেশ ভালোভাবে তৈরি
হবে।
তৃতীয়
সপ্তাহ: ফ্যাট বার্নিং ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং
তৃতীয় সপ্তাহটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ এটি আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে এবং চর্বি পোড়াতে সরাসরি সহায়তা করে। এই সপ্তাহে আপনাকে শরীরের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতেও মনোযোগী হতে হবে। কারণ শুধু ফ্যাট কমালে হবে না, তার সাথে চাই টোনড বডি ও স্ট্যামিনা।
তৃতীয়
সপ্তাহের ফিটনেস প্ল্যান:
·
১৫
মিনিট হাই ইন্টেন্সিটি কার্ডিও
(HIIT)
·
১০
মিনিট স্কোয়াট, লাঞ্জ, পুশ-আপস, সিট-আপস
·
৫
মিনিট কমপাউন্ড এক্সারসাইজ (জাম্পিং স্কোয়াট, বার্পি)
·
৫
মিনিট স্ট্রেচিং
HIIT (High Intensity Interval Training) হল এমন ব্যায়াম
যা স্বল্প সময়ে বেশি ক্যালোরি বার্ন
করে। আপনি চাইলে এই
ভিডিও HASfit
Beginner HIIT Workout দেখে
অনুশীলন করতে পারেন।
এই সপ্তাহে নিজের খাবারে একটু বেশি প্রোটিন
রাখুন। মাংসপেশি গঠনে এটি সহায়তা
করে। প্রচুর পানি পান করুন,
কারণ ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক
ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায়।
চতুর্থ
সপ্তাহ: ফুল-বোডি ওয়ার্কআউট ও মনিটরিং
শেষ
সপ্তাহটি আপনার সার্বিক ফিটনেস উন্নতির চূড়ান্ত ধাপ। এখানে আমরা
পুরো দেহের জন্য ব্যায়াম করব
এবং নিজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করব। এক্ষেত্রে মনের
শক্তিও খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ
শেষ পর্যায়ে অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
দৈনিক
ওয়ার্কআউট পরিকল্পনা:
·
৫
মিনিট ওয়ার্ম আপ
·
২০
মিনিট ফুল-বোডি রুটিন
(লেগ, আর্মস, ব্যাক, কোর)
·
১০
মিনিট ইয়োগা বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ
·
প্রতিদিন
একবার নিজের ওজন, ফিটনেস লেভেল
চেক করা
আপনি
চাইলে এক্সারসাইজ ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন যেমন:
MyFitnessPal, FitOn অথবা
Nike Training Club।
এসব অ্যাপে প্রতিদিনের অগ্রগতি সংরক্ষণ করলে আপনি বুঝতে
পারবেন কোন এলাকায় উন্নতি
করছেন এবং কোথায় আরও
মনোযোগ প্রয়োজন।
এছাড়াও
মনিটরিং-এর অংশ হিসেবে
নিজের ছবি তুলুন, ফিটনেস
জার্নাল আপডেট করুন এবং কোন
ব্যায়াম কতটা করতে পারছেন
তার নোট রাখুন। চ্যালেঞ্জ
শেষে তা হবে আপনার
সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।
ডায়েট
চার্ট: পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা
শুধু
ব্যায়ামে শরীর গঠন হয়
না, ডায়েটই হলো আসল চাবিকাঠি।
অনেকে বলে থাকেন, "ফিটনেস
= ৭০% ডায়েট + ৩০% এক্সারসাইজ"।
তাই ডায়েট নিয়ে উদাসীন হওয়া চলবে না।
প্রোটিন,
কার্বস ও ফ্যাটের সঠিক অনুপাত
একজন
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিনের খাদ্যে ৩০% প্রোটিন, ৪০%
কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং ৩০% হেলদি
ফ্যাট থাকা উচিত। নিচে
একটি সাধারণ ডায়েট চার্ট দেওয়া হলো:
মিল |
খাবার |
সকাল |
১টা
সিদ্ধ ডিম + ১টা কলা + ওটস |
ব্রাঞ্চ |
১
গ্লাস ফলের জুস (চিনি ছাড়া) |
দুপুর |
ব্রাউন
রাইস + গ্রিলড চিকেন/ফিশ + সালাদ |
বিকেল |
১
কাপ গ্রিন টি + ৫টা বাদাম |
রাত |
স্যুপ
+ হালকা রুটি বা সবজি |
প্রোটিনের
উৎস: ডিম, মাছ, চিকেন,
ডাল
কার্বসের উৎস: ওটস, ব্রাউন
রাইস, শস্য
ফ্যাটের উৎস: অলিভ অয়েল,
বাদাম, এভোকাডো
হাইড্রেশন
ও পানি পানের গুরুত্ব
দেহের
কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে পানি অপরিহার্য। প্রতিদিন
অন্তত ২.৫ থেকে
৩ লিটার পানি পান করুন।
পানি শরীর থেকে টক্সিন
বের করতে সাহায্য করে
এবং ওজন কমাতে কার্যকর।
আপনি চাইলে লেবু পানি বা
ডিটক্স ওয়াটার রাখতে পারেন, যা হজমে সহায়তা
করে।
খাবারের
সময়সূচী ও ক্যালরি কন্ট্রোল
সময়মতো
খাওয়াটা যতটা জরুরি, ততটাই
জরুরি পরিমাণ বুঝে খাওয়া। বেশি
খাওয়া বা একসাথে অনেকক্ষণ
না খেয়ে থাকা উভয়ই শরীরের
ক্ষতি করে। দিনে অন্তত
৫ বার ছোট ছোট
মিল নিন। এতে শরীর
সারাদিন সক্রিয় থাকে এবং বেশি
খাওয়ার প্রবণতা কমে।
আপনি
চাইলে আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদা Mayo Clinic’s Calorie Calculator দিয়ে বের
করতে পারেন।
ঘরোয়া
ওয়ার্কআউট বনাম জিম ট্রেনিং
অনেকেই
দ্বিধায় থাকেন, জিমে যাবেন নাকি
ঘরে ব্যায়াম করবেন? আসলে এটা সম্পূর্ণ
আপনার রুটিন, লাইফস্টাইল এবং আর্থিক সামর্থ্যের
ওপর নির্ভর করে।
কোনটা
আপনার জন্য উপযুক্ত?
- আপনি যদি...
o সময়ের অভাবে বাইরে যেতে না পারেন
= ঘরোয়া ওয়ার্কআউট উপযুক্ত
o প্রফেশনাল ট্রেইনার ও মেশিন চান
= জিম উপযুক্ত
o ইনফেকশন বা পাবলিক প্লেসে
যেতে দ্বিধা থাকে = ঘরোয়া উপযুক্ত
o সামাজিক ইন্টারঅ্যাকশন ও মোটিভেশন চান
= জিম উপযুক্ত
যেসব
সরঞ্জাম দরকার ঘরোয়া ব্যায়ামে
আপনি
চাইলে সামান্য কিছু সরঞ্জাম দিয়ে
সহজেই ঘরেই একটি ছোট
ফিটনেস কর্নার তৈরি করতে পারেন:
·
যোগা
ম্যাট
·
রেসিস্ট্যান্স
ব্যান্ড
·
স্কিপিং
রোপ
·
লাইট
ওয়েট ডাম্বেল
এগুলো
কম দামে অনলাইন মার্কেটে
পাওয়া যায়। ঘরোয়া ব্যায়ামের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো
— আপনি সময়মতো নিজের মত করে ব্যায়াম
করতে পারবেন।
কম
খরচে ফিটনেসে মনোযোগ
একটি
জিমে সদস্য হওয়া মানেই আপনি ফিটনেস সচেতন
— এমন নয়। ইউটিউব চ্যানেল
যেমন Blogilates, FitnessBlender এগুলোর সাহায্যে ঘরে বসেই প্রফেশনাল
ট্রেনিং নিতে পারেন। সবটাই
বিনামূল্যে এবং আপনি চাইলে
নিজের পছন্দ অনুযায়ী টাইম ও ইন্টেন্সিটি
নির্বাচন করতে পারবেন।
মাইন্ডসেট
এবং মোটিভেশন ধরে রাখার কৌশল
ফিটনেস
কেবল শারীরিক নয়, এটি একটি
মানসিক খেলা। যারা মন থেকে
প্রস্তুত থাকে তারাই দীর্ঘমেয়াদে
সফল হয়। অনেকেই শুরু
করেন কিন্তু মাসের মাঝপথে হারিয়ে যান শুধুমাত্র মোটিভেশন
না থাকার কারণে। তাই ফিটনেস চ্যালেঞ্জ
সফল করতে চাই কিছু
চমৎকার মনস্তাত্ত্বিক কৌশল।
রুটিন
মেনে চলার গুরুত্ব
রুটিন
মানে একঘেয়ে জীবন নয়, বরং
একটি গাইডলাইন যা আপনাকে ধারাবাহিকতা
শেখায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, ঘুমানো, ওয়ার্কআউট করা — এই অভ্যাস গড়ে
তুললে শরীর এক ধরণের
"বায়োলজিক্যাল ক্লক" অনুযায়ী চলতে শুরু করে।
এতে ফলাফল আসে দ্রুত এবং
আপনি নিজেও বেশি এনার্জেটিক বোধ
করবেন।
একটি
সিম্পল সাপ্তাহিক রুটিন মেইনটেইন করুন এবং সেটিকে
ঘরের দেয়ালে সাঁটিয়ে দিন। রুটিন মেনে
চললে আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাসও তৈরি হবে।
ছোট
লক্ষ্য পূরণে নিজেকে পুরস্কৃত করা
একবারে
বিশাল কিছু পাওয়া কঠিন,
কিন্তু ছোট ছোট মাইলস্টোন
তৈরি করলে তা অর্জন
করা সহজ হয়। যেমন,
"আজ আমি ৩০ মিনিট
একটানা হাঁটতে পেরেছি", "সপ্তাহে তিনবার ব্যায়াম করেছি" ইত্যাদি।
এই ধরণের সফলতার জন্য নিজেকে ছোট
উপহার দিন—প্রিয় খাবার
খাওয়া, একটি সিনেমা দেখা
কিংবা নতুন জিম ক্লথ
কেনা। এতে আপনার মন
উজ্জীবিত থাকবে এবং আপনি ফিটনেসকে
জীবনধারার অংশ হিসেবে গ্রহণ
করতে পারবেন।
ফিটনেস
জার্নাল বা অ্যাপ ব্যবহার
আপনি
যদি প্রতিদিনের ফিটনেস প্রোগ্রেস লিখে রাখেন, তাহলে
তা হবে আপনার সবচেয়ে
বড় মোটিভেশন। শুরুতে আপনি কতটা করতে
পারতেন আর এখন কতটা
পারছেন—এই তুলনা দেখে
আপনি নিজেই অবাক হবেন।
বেস্ট অ্যাপস:
·
Google Fit
·
Jefit
·
Strava
·
Samsung Health
এই অ্যাপগুলোতে আপনি ওয়ার্কআউট টাইম,
ক্যালরি বার্ন, ওজন পরিবর্তন এবং
অন্যান্য মেট্রিক ট্র্যাক করতে পারবেন।
চলতি
সময়ে সাধারণ ভুল এবং সেগুলো এড়ানোর উপায়
ফিটনেস
শুরু করতে গিয়ে নতুনরা
সাধারণত কিছু ভুল করে
বসে, যেগুলো উন্নতির পরিবর্তে শরীরের ক্ষতি করে। নিচে এমন
কিছু ভুল এবং সেগুলো
এড়ানোর কৌশল শেয়ার করছি।
অতিরিক্ত
ব্যায়াম ও ওভারট্রেনিং
অনেকেই
মনে করেন যত বেশি
এক্সারসাইজ করবেন, তত দ্রুত ফলাফল
আসবে। কিন্তু বাস্তবে বেশি ব্যায়াম করলে
শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং
ইনজুরির আশঙ্কা থাকে। শুরুর দিকে ৩০-৪০
মিনিট ব্যায়ামই যথেষ্ট। এরপর ধীরে ধীরে
সময় বাড়ানো উচিত।
চিনে নিন ওভারট্রেনিং-এর লক্ষণ:
- অতিরিক্ত ক্লান্তি
- ঘুমে সমস্যা
- খাবারে অরুচি
- মাথা ঘোরা
এমন
লক্ষণ দেখা দিলে অন্তত
একদিন বিশ্রাম নিন এবং প্রয়োজনে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অনিয়মিত
ঘুম ও তার প্রভাব
সঠিক
ঘুম ছাড়া ফিটনেস অসম্ভব। আপনি যদি প্রতিদিন
ঠিকভাবে ঘুম নাান, তাহলে
শরীর কখনোই ঠিকভাবে রিকভার করতে পারবে না।
ফলে ব্যায়াম করেও কোনও উন্নতি
দেখা যাবে না।
ঘুম ভালো করার টিপস:
- রাতে মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার কমান
- বিছানায় যাওয়ার আগে হালকা বই পড়ুন বা ধ্যান করুন
- ঘুমানোর ঘর অন্ধকার ও ঠান্ডা রাখুন
শরীরের
সংকেত বোঝা শেখা
শরীর
সবসময়ই আমাদের কিছু না কিছু
সংকেত দেয়। ব্যথা হলে সেটা উপেক্ষা
না করে বিশ্রাম নিন।
হঠাৎ করে শ্বাস নিতে
সমস্যা হলে বা মাথা
ঘুরলে তা অবহেলা করবেন
না। ফিটনেস মানে নিজের শরীরকে
চেনা, ভালোবাসা এবং সময়মতো যত্ন
নেওয়া।
ফলাফল
বিশ্লেষণ ও চ্যালেঞ্জ শেষ করার পর করণীয়
৩০ দিনের এই চ্যালেঞ্জ শেষে
আপনি যে উন্নতি করেছেন
তা জানার সময় এসেছে। এখন
আপনার দরকার ফলাফল বিশ্লেষণ এবং এই অভ্যাসকে
দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখার প্রস্তুতি।
বডি
মেজারমেন্ট ও রিপোর্টিং
এক মাস আগের মতো
আবার মেজারমেন্ট নিন:
- ওজন
- কোমরের মাপ
- বুক ও হাতের মাপ
- BMI
এছাড়াও
তুলনামূলক ছবি তুলুন “Before & After” হিসেবে। এতে আপনি নিজে
যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনি অন্যদেরকেও ফিটনেস চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে উৎসাহিত
করতে পারবেন।
দীর্ঘমেয়াদি
ফিটনেস রুটিনে রূপান্তর
৩০ দিনের পর আপনি চাইলে
এই অভ্যাসকে দীর্ঘমেয়াদি লাইফস্টাইলে রূপ দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে প্রতি মাসে নতুন লক্ষ্য
নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ:
- ফেব্রুয়ারি: ৫ কেজি ওজন কমানো
- মার্চ: আরও ফ্লেক্সিবল হওয়া
- এপ্রিল: নতুন ফিটনেস ক্লাসে যোগদান
এভাবে
লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যান।
সেলিব্রেশন
ও মোটিভেশন বজায় রাখা
নিজেকে
অভিনন্দন জানান! আপনি এই ৩০
দিনের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে শেষ করেছেন। এই
সাফল্যকে উদযাপন করুন — পরিবারের সঙ্গে আউটিং, প্রিয় রেস্টুরেন্টে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বা নিজের জন্য
নতুন কিছুর কেনাকাটা।
তবে
উদযাপন যেন কখনোই আপনাকে
আবার অলস করে না
তোলে। এক্সাইটেড থাকুন এবং পরবর্তী চ্যালেঞ্জের
জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
উপসংহার
ফিটনেস
হলো ধৈর্যের খেলা। এটা একদিনে হয়
না, বরং প্রতিদিন ছোট
ছোট চেষ্টায় গঠিত হয় বড়
অর্জন। আপনি যদি এই
৩০ দিনের চ্যালেঞ্জে মন থেকে অংশ
নেন, তাহলে আপনি শুধু শারীরিক
পরিবর্তনই নয়, মানসিক শক্তিও
অর্জন করবেন।
এই যাত্রা চলমান রাখতে চাই ইচ্ছাশক্তি, সামঞ্জস্যপূর্ণ
রুটিন, পুষ্টিকর খাবার ও মনোবল। এখন
আপনার পালা—এই গাইড
ফলো করে দিন শুরু
করুন, কারণ "আপনার শরীরই আপনার আসল বাড়ি"।
প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ (FAQs)
১.
৩০ দিনের এই চ্যালেঞ্জ কি সবাই করতে পারবে?
হ্যাঁ,
যেকেউ করতে পারে। তবে
যদি আপনি কোনো স্বাস্থ্য
সমস্যায় ভুগেন, আগে একজন ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া ভালো।
২.
ওয়ার্কআউট করার সময় কোন সময় সবচেয়ে ভালো?
সকালে
খালি পেটে হালকা ওয়ার্কআউট
সবচেয়ে কার্যকর। তবে আপনার সময়ানুযায়ী
ব্যায়াম করলেই হবে।
৩.
এই চ্যালেঞ্জ শেষে কি আমার ওজন স্থায়ীভাবে কমে থাকবে?
আপনি
যদি রুটিন মেইনটেইন করেন, তবে স্থায়ীভাবে ওজন
নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
৪.
দিনে একবার ব্যায়াম করলেই হবে?
হ্যাঁ,
দিনে একবার অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম
করলেই চ্যালেঞ্জ সফল হবে। চাইলে
সকালে ও বিকেলে ছোট
দুটি সেশন করতে পারেন।
৫.
যদি আমি মাঝপথে ব্যায়াম বাদ দিই তাহলে কী করব?
মাঝপথে
ব্যায়াম বাদ পড়লেও দুঃখিত
হবেন না। পরের দিন
আবার নতুন উদ্যমে শুরু
করুন। ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই আসল।
👉 🙏🙏 লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅ আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন