ভালো থাকার গল্পগুলোও মানসিক স্বাস্থ্য দিয়ে শুরু | একটি সম্পূর্ণ গাইড
ভালো থাকার গল্পগুলোও মানসিক স্বাস্থ্য দিয়ে শুরু: একটি গভীর বিশ্লেষণ
আমরা সবাই জীবনে ভালো থাকতে চাই। সাফল্য, সুখ, সমৃদ্ধি আর
ভালোবাসায় ভরা একটি জীবন—এটাই আমাদের সবার অবচেতন মনের কামনা। আমরা প্রায়শই মনে করি, ভালো একটি চাকরি, সুন্দর একটি বাড়ি, কিংবা সামাজিক প্রতিপত্তি
পেলেই হয়তো ভালো থাকার সেই কাঙ্ক্ষিত শিখরে পৌঁছানো যাবে। কিন্তু আমরা কি কখনো
ভেবে দেখেছি, এই ভালো থাকার গল্পের আসল সূচনা কোথায়? এর শেকড় কতটা
গভীরে প্রোথিত?
সত্যিটা হলো, আমাদের জীবনের সমস্ত ভালো থাকার গল্পের
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল
মন ছাড়া বাহ্যিক কোনো সাফল্যই দীর্ঘস্থায়ী আনন্দ বা শান্তি দিতে পারে না। আমাদের
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, প্রতিটি সিদ্ধান্ত এবং প্রতিটি অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়
আমাদের মনের অবস্থা দ্বারা। তাই বলা যায়, "ভালো থাকার গল্পগুলোও
মানসিক স্বাস্থ্য দিয়ে শুরু"—এটি শুধু একটি উক্তি নয়, এটি একটি চিরন্তন সত্য।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই গভীর সত্যটিকে উন্মোচন করব। আমরা
জানব, কীভাবে মানসিক
স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে এবং কীভাবে আমরা মানসিক
স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে একটি সত্যিকারের সুখী ও পরিপূর্ণ জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে
পারি।
মানসিক স্বাস্থ্য কী? এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য বলতে শুধু মানসিক রোগের
অনুপস্থিতিকেই বুঝি। কিন্তু এর অর্থ আরও অনেক ব্যাপক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)
এর মতে,
মানসিক
স্বাস্থ্য হলো একটি সুস্থতার অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি তার নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি
করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপ মোকাবেলা করতে পারে, উৎপাদনশীলভাবে
কাজ করতে পারে এবং তার কমিউনিটিতে অবদান রাখতে পারে।
সহজ কথায়, মানসিক স্বাস্থ্য হলো:
·
চিন্তার স্বচ্ছতা: পরিস্থিতিকে
সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা।
·
আবেগীয় স্থিতিশীলতা: নিজের আবেগ
বোঝা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা।
·
মানিয়ে চলার ক্ষমতা: জীবনের কঠিন
পরিস্থিতি বা চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া (Resilience)।
·
সুস্থ সম্পর্ক: পরিবার,
বন্ধু এবং
সহকর্মীদের সাথে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
·
আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর
বিশ্বাস রাখা এবং নিজের মূল্য বোঝা।
এই প্রতিটি উপাদানই আমাদের "ভালো থাকা" বা Well-being
এর জন্য
অপরিহার্য। একটি শক্তিশালী মানসিক ভিত্তি ছাড়া জীবনের প্রাসাদটি যেকোনো ছোট ঝড়েও ভেঙে
পড়তে পারে।
জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য মূল ভূমিকা পালন করে?
আসুন, একটু গভীরভাবে দেখি কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের
প্রতিটি গল্পকে সুন্দর বা অসুন্দর করে তুলতে পারে।
১. শারীরিক স্বাস্থ্যের ভিত্তি হলো মানসিক স্বাস্থ্য
মন এবং শরীরের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সংযোগ রয়েছে। এই
সংযোগটি এতটাই শক্তিশালী যে, একটির প্রভাব অন্যটির উপর পড়বেই।
·
স্ট্রেস ও তার প্রভাব: দীর্ঘস্থায়ী
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস আমাদের শরীরে কর্টিসল (Cortisol) নামক হরমোনের মাত্রা
বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এবং স্থূলতার
মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। একটি শান্ত মন শরীরকেও শান্ত রাখে।
·
ঘুমের গুণমান: দুশ্চিন্তা,
উদ্বেগ বা
বিষণ্ণতা আমাদের ঘুমের চক্রকে নষ্ট করে দেয়। অপর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শারীরিক ও
মানসিক কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য
সমস্যা তৈরি করে।
·
খাদ্যাভ্যাস: মানসিক
অস্থিরতা প্রায়ই আমাদের খাদ্যাভ্যাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কেউ অতিরিক্ত খেতে
শুরু করে (Emotional Eating), আবার কেউ খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেয়। দুটোই শরীরের জন্য
ক্ষতিকর।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মানসিক স্বাস্থ্যের
দিক থেকে স্থিতিশীল, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রবণতা বেশি, যা তাদের আয়ু
বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই, আপনার শারীরিক সুস্থতার গল্পটিও কিন্তু শুরু হচ্ছে আপনার
মনের উঠোন থেকেই।
২. সম্পর্কগুলোর প্রাণকেন্দ্র: মানসিক সুস্থতা
মানুষ সামাজিক জীব। পরিবার, বন্ধু, জীবনসঙ্গী—এই
সম্পর্কগুলো আমাদের জীবনের অন্যতম বড় শক্তি। কিন্তু এই সম্পর্কগুলো কেমন হবে,
তা অনেকাংশেই
নির্ভর করে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর।
·
যোগাযোগের দক্ষতা: একজন
মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি নিজের অনুভূতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারেন এবং অন্যের
কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারেন। এটি যেকোনো সুস্থ সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।
·
সহানুভূতি এবং ক্ষমা: মানসিক
স্থিতিশীলতা আমাদের অন্যের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে এবং ছোটখাটো ভুলত্রুটি
ক্ষমা করতে শেখায়। ফলে সম্পর্কগুলো আরও মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
·
সীমানা নির্ধারণ: মানসিকভাবে
শক্তিশালী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রয়োজনের কথা বলতে ভয় পান না এবং সম্পর্কের
ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর সীমানা (Healthy Boundaries) বজায় রাখতে পারেন। এটি
তাদের আত্মসম্মান রক্ষা করে এবং বিষাক্ত সম্পর্ক (Toxic Relationship) থেকে দূরে রাখে।
বিপরীতে, একজন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তি খিটখিটে মেজাজ, সন্দেহ বা
অহেতুক ঝগড়ার মাধ্যমে নিজের কাছের সম্পর্কগুলোকেও নষ্ট করে ফেলতে পারেন।
৩. কর্মজীবন ও সাফল্যের চালিকাশক্তি
আমরা আমাদের জীবনের একটি বড় অংশ কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করি।
পেশাগত সাফল্য আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। এখানেও
মানসিক স্বাস্থ্য প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
·
মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা: একটি শান্ত ও
ফোকাসড মন যেকোনো কাজে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারে। এর ফলে কাজের গুণমান বাড়ে এবং
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মানসিক চাপ বা উদ্বেগ আমাদের মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করে,
যা কাজের
ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুলের কারণ হতে পারে।
·
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা: কর্মক্ষেত্রে
প্রতিদিন আমাদের ছোট-বড় নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মানসিক স্বচ্ছতা আমাদের সঠিক ও
যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আবেগতাড়িত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মন প্রায়শই
ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
·
সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন: সৃজনশীলতার
জন্য একটি মুক্ত ও চাপহীন মন প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে নতুন ধারণা
তৈরি হয় এবং সমস্যার সমাধানে উদ্ভাবনী পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
·
চাপ মোকাবেলার ক্ষমতা: কর্মক্ষেত্রের
চাপ (Workplace Stress) এড়ানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে সেই
চাপকে ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা করা যায় এবং বার্নআউট (Burnout) এড়ানো সম্ভব হয়।
তাই, আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতির গল্পটিও কিন্তু মানসিক
স্বাস্থ্যের উপরই দাঁড়িয়ে আছে।
৪. জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বর্ম
জীবন কখনোই সরলরৈখিক নয়। এতে উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা,
আনন্দ-বেদনা
থাকবেই। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমাদের যে শক্তি প্রয়োজন, তা আসে মানসিক
দৃঢ়তা বা Resilience থেকে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে:
·
আমরা ব্যর্থতাকে সহজে মেনে নিতে পারি: ব্যর্থতাকে জীবনের শেষ হিসেবে না দেখে, একটি শিক্ষা
হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি হয়।
·
আমরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারি: কোনো আঘাত বা
ধাক্কা সামলে নিয়ে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষমতা বাড়ে।
·
আমরা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারি: জীবনের যেকোনো পরিবর্তনকে (চাকরি পরিবর্তন, সম্পর্কচ্ছেদ,
স্থান
পরিবর্তন) ভয় না পেয়ে, সেটিকে নতুন সুযোগ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।
দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের ছোটখাটো সমস্যাতেও ভেঙে
পড়তে বাধ্য করে, যা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে রুদ্ধ করে দেয়।
কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন? ভালো থাকার গল্পের লেখক হবেন আপনিই!
এতক্ষণে আমরা বুঝেছি যে, মানসিক স্বাস্থ্যই আমাদের
ভালো থাকার মূল ভিত্তি। এখন প্রশ্ন হলো, এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের যত্ন নেব কীভাবে?
সুখবর হলো,
কিছু সহজ ও
কার্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করতে
পারি।
১. নিজের অনুভূতির সাথে সংযোগ স্থাপন করুন (Mindfulness)
প্রতিদিন কিছুটা সময় বের করে নিজের মনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ
করুন। আপনি কি অনুভব করছেন? কেন করছেন? কোনো বিচার বা বিশ্লেষণ ছাড়াই শুধু নিজের অনুভূতিকে
স্বীকৃতি দিন। জার্নালিং বা ডায়েরি লেখা এক্ষেত্রে খুব সহায়ক হতে পারে। এটি
আপনার ভেতরের আবেগগুলোকে বের করে আনতে সাহায্য করে।
২. শারীরিক ব্যায়ামকে রুটিনে আনুন
শারীরিক ব্যায়াম শুধু শরীরকে নয়, মনকেও সুস্থ রাখে।
ব্যায়ামের সময় আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন (Endorphin) নামক হরমোন
নিঃসৃত হয়, যা "Feel-Good" হরমোন নামে পরিচিত। এটি
প্রাকৃতিকভাবে আমাদের মনকে ভালো রাখে এবং উদ্বেগ কমায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট
হাঁটা, দৌড়ানো,
যোগব্যায়াম বা
আপনার পছন্দের যেকোনো শারীরিক কাজ করুন।
৩. পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম নিশ্চিত করুন
ঘুম আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি 'রিসেট বাটন'-এর মতো কাজ
করে। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক সারাদিনের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে এবং নিজেকে
মেরামত করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য
অপরিহার্য। ভালো ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন এবং শোবার আগে মোবাইল
বা ল্যাপটপের ব্যবহার কমান।
৪. সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
আপনি যা খান, তার সরাসরি প্রভাব আপনার মনের উপর পড়ে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট আমাদের মস্তিষ্কের
কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং মেজাজ খিটখিটে করে তোলে। এর পরিবর্তে আপনার
খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য (Whole Grains), এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
যোগ করুন। বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার (যেমন - মাছ, বাদাম)
মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। এই বিষয়ে আরও জানতে আপনি Harvard Health Publishing এর এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
৫. সামাজিক সংযোগ বজায় রাখুন
পরিবার এবং সত্যিকারের বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। আপনার
অনুভূতি এবং সমস্যাগুলো তাদের সাথে শেয়ার করুন। সামাজিক সমর্থন আমাদের একাকীত্ব
দূর করে এবং মানসিক শক্তি যোগায়। মনে রাখবেন, ভার্চুয়াল জগতের হাজারো
বন্ধুর চেয়ে বাস্তব জগতের একজন সত্যিকারের বন্ধু অনেক বেশি মূল্যবান।
৬. নতুন কিছু শিখুন বা শখ গড়ে তুলুন
নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন বা শখের পেছনে সময় দেওয়া আমাদের
মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটি হতে পারে নতুন কোনো ভাষা
শেখা, ছবি আঁকা,
বাগান করা বা
গিটার বাজানো। এই কাজগুলো আমাদের মনকে দৈনন্দিন চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
৭. ডিজিটাল ডিটক্স অনুশীলন করুন
আধুনিক জীবনে স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড়
উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমাগত অন্যের "পারফেক্ট" জীবনযাত্রা
দেখা আমাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা এবং অসন্তোষ তৈরি করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু
সময়ের জন্য ফোন এবং ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকুন। এই সময়টা নিজেকে বা প্রিয়জনকে
দিন।
৮. প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না
শরীরের অসুখ হলে আমরা যেমন ডাক্তারের কাছে যাই, মনের
অসুবিধাতেও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়াটা ঠিক ততটাই স্বাভাবিক। যদি আপনি দীর্ঘ সময়
ধরে মানসিক কষ্টে ভোগেন, যেমন - অতিরিক্ত উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, বা মেজাজের চরম
ওঠানামা, তবে একজন মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
মনে রাখবেন, সাহায্য চাওয়া দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং এটি নিজের প্রতি
যত্নবান হওয়ার একটি সাহসী পদক্ষেপ। বাংলাদেশে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান মানসিক
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে, যেমন - মনের বন্ধু (Moner Bondhu)।
উপসংহার
জীবনের প্রতিটি ভালো গল্প—সেটা হোক সাফল্য, ভালোবাসা বা
শান্তির—তার শেকড় প্রোথিত থাকে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের মাটিতে। একটি অট্টালিকা
যেমন একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে, আমাদের ভালো থাকার অনুভূতিও
তেমনি একটি স্থিতিশীল মনের উপর নির্ভরশীল।
আমরা প্রায়ই বাহ্যিক অর্জনগুলোর পেছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের
ভেতরের জগৎটাকে অবহেলা করি। কিন্তু আসল সত্য হলো, ভেতরের জগৎটা গোছানো না
থাকলে বাইরের জগতের কোনো কিছুই আমাদের স্থায়ী আনন্দ দিতে পারে না। মানসিক
স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ।
তাই আজ থেকেই আপনার মনের যত্ন নিতে শুরু করুন। নিজের
অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রয়োজনে সাহায্য চান।
কারণ আপনার ভালো থাকার গল্পের লেখক আপনি নিজেই, আর সেই গল্পের প্রথম
অধ্যায়টি শুরু হবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য দিয়েই।
প্রশ্ন-উত্তর পর্ব (FAQ)
প্রশ্ন ১: আমি প্রায়ই মন খারাপ বা উদ্বেগে ভুগি। এর মানে
কি আমার মানসিক রোগ হয়েছে?
উত্তর: না, মাঝে মাঝে মন খারাপ, উদ্বেগ বা চাপ অনুভব করা
জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। এটি মানসিক রোগ নয়। তবে এই অনুভূতিগুলো যদি
দীর্ঘস্থায়ী হয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনকে (যেমন - কাজ, পড়াশোনা, সম্পর্ক)
মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে এবং আপনি নিজে থেকে এটি সামলাতে পারছেন না, তবে একজন
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ২: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কি থেরাপি
নেওয়া বাধ্যতামূলক?
উত্তর: বাধ্যতামূলক নয়। অনেক ক্ষেত্রে, জীবনযাত্রায় ইতিবাচক
পরিবর্তন এনে (যেমন - ব্যায়াম, সঠিক ঘুম, খাদ্যাভ্যাস, মেডিটেশন) মানসিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব। তবে,
যদি সমস্যাটি
গভীর হয় বা নিজের চেষ্টায় উন্নতি না হয়, তখন থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর
একটি উপায়। থেরাপিস্ট আপনাকে আপনার সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে এবং তা
মোকাবেলার কৌশল শিখতে সাহায্য করেন।
প্রশ্ন ৩: কীভাবে আমি আমার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যকে তার
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করতে পারি?
উত্তর: এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়। আপনি কোনো বিচার না করে, সহানুভূতি
নিয়ে তার কথা শোনার প্রস্তাব দিতে পারেন। সরাসরি "তোমার কি সমস্যা?"
জিজ্ঞেস না করে
বলতে পারেন, "আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছুদিন ধরে একটু অন্যরকম আছো, সব ঠিক আছে তো?
আমি তোমার পাশে
আছি।" তাকে কথা বলার জন্য নিরাপদ পরিবেশ দিন এবং জোর করবেন না। প্রয়োজনে
তাকে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে উৎসাহিত করতে পারেন।
প্রশ্ন ৪: মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে
আসল সংযোগটি কী?
উত্তর: মন এবং শরীর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক চাপ (Stress)
শরীরকে 'ফাইট-অর-ফ্লাইট'
মোডে নিয়ে
যায়, যা হৃদস্পন্দন,
রক্তচাপ এবং
কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে এটি চলতে থাকলে তা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং
হজমের সমস্যার মতো শারীরিক রোগের কারণ হয়। অন্যদিকে, শারীরিক অসুস্থতাও আমাদের
মনে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। তাই একটিকে ছাড়া অন্যটি সুস্থ রাখা
প্রায় অসম্ভব।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশে ভালো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কোথায়
পাওয়া যাবে?
উত্তর: বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NIMH),
বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এবং বিভিন্ন বেসরকারি
ক্লিনিক ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে (যেমন - মনের বন্ধু, লাইফস্প্রিং) অভিজ্ঞ মনোবিদ
ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য পাওয়া যায়।
👉 🙏🙏 লেখার মধ্যে ভাষা
জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅ আজ এ পর্যন্তই ভালো
থাকবেন সুস্থ থাকবেন
