প্রতিদিন এই ৫ অভ্যাস আপনাকে রাখবে রোগমুক্ত: একটি সম্পূর্ণ জীবনধারা গাইড
ভূমিকা
"স্বাস্থ্যই
সকল সুখের মূল" - এই প্রবাদটি আমরা
ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি।
আজকের দ্রুতগতির আধুনিক জীবনে, যেখানে মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর
খাদ্যাভ্যাস আমাদের নিত্যসঙ্গী, সেখানে রোগমুক্ত জীবনযাপন করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু
কিছু সহজ দৈনন্দিন অভ্যাস
মেনে চললে আমরা বহুলাংশে
রোগমুক্ত থাকতে পারি এবং একটি
সুস্থ, সুন্দর জীবন উপভোগ করতে
পারি। এই
ব্লগে আমরা এমন ৫টি
গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব যা প্রতিদিন
অনুশীলন করলে আপনি রোগমুক্ত
থাকতে পারবেন। এই
অভ্যাসগুলো শুধু শারীরিক নয়,
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস (Balanced and Nutritious Diet)
রোগমুক্ত
জীবনের প্রথম এবং প্রধান শর্ত
হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। আমরা
যা খাই, তার সরাসরি
প্রভাব আমাদের শরীরের ওপর পড়ে।
একটি সুষম খাদ্যতালিকা আমাদের
শরীরকে সঠিকভাবে চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয়
পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ
করে।
- সুষম খাদ্যের গুরুত্ব:
-
সুষম খাদ্য বলতে বোঝায় যেখানে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ এবং পানি সঠিক অনুপাতে থাকে। এটি
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সচল রাখে এবং শক্তি জোগায়। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রদান করে।
- কী খাবেন:
- তাজা ফল ও সবজি: প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় কমপক্ষে ৫ ধরনের ফল ও রঙিন শাকসবজি রাখুন। এগুলোতে প্রচুর
পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ফাইবার থাকে যা শরীরকে বিষমুক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- শস্য বা হোল গ্রেইন: লাল চাল, লাল আটা, ওটস, বার্লি ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাবার কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন: মাছ, মাংস (বিশেষ করে মুরগি), ডিম, দুধ, ডাল, মটরশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন শরীরের
কোষ গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ (যেমন: স্যামন, টুনা), অ্যাভোকাডো, বাদাম, অলিভ অয়েল ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আমাদের হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
- পর্যাপ্ত পানি: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস (২-৩ লিটার) পানি পান করা আবশ্যক। পানি শরীরের
বর্জ্য পদার্থ দূর করে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সচল রাখে।
- কী খাবেন না বা কম খাবেন:
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাস্ট ফুড, চিপস, প্যাকেটজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- মিষ্টি পানীয়: কোমল পানীয়, বাজারের কেনা ফলের রস (চিনিযুক্ত) ইত্যাদি বর্জন করুন।
- ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ভাজাভুজি, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, রেড মিট (সীমিত পরিমাণে) ইত্যাদি কম খান।
- খাদ্যাভ্যাসের টিপস:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান।
- খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
- অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- বাড়িতে রান্না করা খাবারের ওপর জোর দিন।
সুষম
খাদ্যাভ্যাস শুধুমাত্র ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
না, বরং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ,
উচ্চ রক্তচাপ এবং কিছু ক্যান্সারের
ঝুঁকিও কমায়।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম (Regular Physical Exercise)
সুস্থ
জীবনের জন্য খাদ্যাভ্যাসের মতোই
গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিত শারীরিক
ব্যায়াম। ব্যায়াম
আমাদের শরীরকে ফিট রাখে, রক্ত
সঞ্চালন বাড়ায়, পেশী শক্তিশালী করে
এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
- ব্যায়ামের উপকারিতা:
- রোগ প্রতিরোধ: নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- হাড় ও পেশীর শক্তি: ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং পেশী শক্তিশালী করে, যা অস্টিওপরোসিস এবং বয়সজনিত দুর্বলতা প্রতিরোধ করে।
- মানসিক স্বাস্থ্য: ব্যায়াম করলে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা "ভালো লাগার" অনুভূতি তৈরি করে। এটি মানসিক
চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।
- ভালো ঘুম: নিয়মিত ব্যায়াম ঘুমের মান উন্নত করে।
- শক্তি বৃদ্ধি: শারীরিক কার্যকলাপ শরীরের শক্তিস্তর বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
- কতটুকু ব্যায়াম প্রয়োজন?
-
বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে অন্তত ১৫০-৩০০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম (যেমন: দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার) অথবা ৭৫-১৫০ মিনিট তীব্র অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। এর
পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত ২ দিন পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম করা ভালো।
- কী ধরনের ব্যায়াম করবেন:
- অ্যারোবিক ব্যায়াম: হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার, সাইকেল চালানো, নাচ ইত্যাদি।
- শক্তি বর্ধক ব্যায়াম: পুশ-আপ, স্কোয়াট, ওজন তোলা, যোগব্যায়াম।
- নমনীয়তা ব্যায়াম: স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম।
- ব্যায়ামকে অভ্যাসে পরিণত করার উপায়:
- আপনার পছন্দের কোনো ব্যায়াম বেছে নিন যা করতে আপনি আনন্দ পান।
- প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়ামের জন্য রাখুন।
- ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় ও তীব্রতা বাড়ান।
- বন্ধুদের সাথে বা গ্রুপে ব্যায়াম করতে পারেন, এতে উৎসাহ বজায় থাকে।
- লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, কাছাকাছি দূরত্বে হেঁটে যান।
শারীরিকভাবে
সক্রিয় থাকা একটি দীর্ঘমেয়াদী
বিনিয়োগ যা আপনাকে বহু
বছর ধরে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করবে।
পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন ঘুম (Adequate and Quality Sleep)
শরীর
ও মনকে সতেজ এবং
কর্মক্ষম রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ঘুম
আমাদের শরীরকে মেরামত করে, স্মৃতিশক্তি গোছাতে
সাহায্য করে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
- ঘুমের প্রয়োজনীয়তা:
- শারীরিক পুনরুদ্ধার: ঘুমের সময় আমাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করে এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: ঘুম স্মৃতিশক্তি সুসংহত করতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ: পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ফলে শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়াই করতে পারে।
- মানসিক ভারসাম্য: ঘুমের অভাব খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।
- কতটুকু ঘুম প্রয়োজন?
-
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন রাতে ৭-৯ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম প্রয়োজন। তবে
এটি ব্যক্তিভেদে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। ন্যাশনাল
স্লিপ ফাউন্ডেশন ঘুমের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশদ তথ্য প্রদান করে।
- ভালো ঘুমের জন্য টিপস (স্লিপ হাইজিন):
- নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন, এমনকি ছুটির দিনেও।
- ঘুমের পরিবেশ: শোবার ঘর অন্ধকার, শান্ত ও শীতল রাখুন। আরামদায়ক বিছানা
ও বালিশ ব্যবহার করুন।
- ঘুমানোর আগে প্রস্তুতি: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ইত্যাদি স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। হালকা গরম
পানিতে গোসল, বই পড়া বা শান্ত সঙ্গীত শোনা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাস: ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার, ক্যাফেইন (চা, কফি) বা অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
- দিনের বেলা সক্রিয়তা: দিনের বেলায় নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে তীব্র ব্যায়াম করবেন না।
অপর্যাপ্ত
ঘুম দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য
সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই,
ঘুমকে অবহেলা না করে এর
প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক সুস্থতা (Stress Management and Mental Well-being)
শারীরিক
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও রোগমুক্ত জীবনের জন্য অপরিহার্য।
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ আমাদের শরীরের
ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং বিভিন্ন
রোগের কারণ হতে পারে।
- মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব:
-
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হজমের সমস্যা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়:
- ধ্যান (Meditation) ও মাইন্ডফুলনেস: প্রতিদিন কিছুক্ষণ ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন মানসিক প্রশান্তি আনে এবং মনোযোগ বাড়ায়।
- যোগব্যায়াম (Yoga): যোগব্যায়াম শরীর ও মনের সমন্বয় সাধন করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- শ্বাসের ব্যায়াম (Breathing
Exercises): গভীর
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক চাপ কমাতে পারে।
- শখের প্রতি মনোযোগ: ছবি আঁকা, গান শোনা, বাগান করা, বই পড়া বা আপনার পছন্দের যেকোনো শখ মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
- সামাজিক যোগাযোগ: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান, তাদের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন।
- প্রকৃতির সান্নিধ্য: প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটালে মন শান্ত হয়।
- সময় ব্যবস্থাপনা: কাজগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করে সময়মতো সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।
- না বলতে শিখুন: সব সময় সবাইকে খুশি করতে গিয়ে নিজের ওপর অতিরিক্ত চাপ নেবেন না।
- পেশাদার সাহায্য: যদি মানসিক চাপ বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। আমেরিকার
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ (NIMH) মানসিক চাপ মোকাবেলার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে তথ্য দেয়।
মানসিক
ভাবে সুস্থ থাকলে আপনি জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো
আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন এবং
সামগ্রিকভাবে একটি সুখী জীবনযাপন
করতে পারবেন।
পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা (Maintaining Hygiene and Sanitation)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রোগ প্রতিরোধের একটি
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাধারণ
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অনেক
ধরনের সংক্রমণ ও অসুস্থতা থেকে
দূরে থাকা যায়।
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি:
- হাত ধোয়া: যেকোনো কিছু খাওয়ার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পরে, বাইরে থেকে ফিরে এবং যখনই হাত নোংরা মনে হবে, তখন সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। এটি ফ্লু,
ডায়রিয়া এবং অন্যান্য অনেক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। সেন্টার
ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানায়।
- নিয়মিত গোসল: প্রতিদিন গোসল করলে শরীর পরিষ্কার থাকে এবং চর্মরোগের ঝুঁকি কমে।
- দাঁত ও মুখের যত্ন: দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা এবং নিয়মিত ফ্লস ব্যবহার করা দাঁত ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে।
- নখ কাটা: নিয়মিত নখ কেটে ছোট রাখলে নখের নিচে ময়লা ও জীবাণু জমতে পারে না।
- হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার: হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকুন। ব্যবহৃত টিস্যু
ডাস্টবিনে ফেলুন এবং হাত ধুয়ে নিন।
- পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা:
- বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত ঘরবাড়ি, রান্নাঘর ও বাথরুম পরিষ্কার রাখলে জীবাণুর বিস্তার কমে।
- নিরাপদ পানি ও খাদ্য: বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং খাবার তৈরির আগে ও পরে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। খাবার সঠিকভাবে
রান্না করুন এবং সংরক্ষণ করুন।
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: বাড়ির আবর্জনা নিয়মিত নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
পরিচ্ছন্নতা
শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, এটি একটি
সামাজিক দায়িত্বও। পরিচ্ছন্ন
পরিবেশ সবার জন্যই স্বাস্থ্যকর।
উপসংহার
রোগমুক্ত
জীবনযাপন করা কোনো অলৌকিক
ঘটনা নয়, বরং এটি
আমাদের প্রতিদিনকার সচেতন পছন্দ এবং অভ্যাসের ফল। উপরে
আলোচিত ৫টি অভ্যাস – সুষম
খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ
নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচ্ছন্নতা – মেনে
চললে আপনি বহুলাংশে রোগমুক্ত
থাকতে পারবেন এবং একটি পরিপূর্ণ,
উদ্যমী জীবন লাভ করবেন।
মনে
রাখবেন, এই অভ্যাসগুলো একদিনে
গড়ে ওঠে না।
ধৈর্য ধরে ছোট ছোট
পদক্ষেপের মাধ্যমে শুরু করুন এবং
ধীরে ধীরে এগুলোকে আপনার
জীবনযাত্রার অংশ করে তুলুন। আপনার
স্বাস্থ্য আপনারই হাতে। সচেতন
হোন, সুস্থ থাকুন!
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন
১: এই ৫টি অভ্যাসের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: প্রতিটি অভ্যাসই একে অপরের সাথে
সম্পর্কিত এবং সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটি
সুস্থ জীবনের জন্য এই ৫টি
অভ্যাসের সমন্বয় প্রয়োজন। কোনো
একটিকে বাদ দিয়ে পরিপূর্ণ
সুফল পাওয়া কঠিন।
প্রশ্ন
২: আমি খুব ব্যস্ত থাকি, ব্যায়ামের জন্য সময় পাই না। কী করতে
পারি?
উত্তর: ব্যায়ামের জন্য ঘণ্টার পর
ঘণ্টা সময় দেওয়ার প্রয়োজন
নেই। প্রতিদিন
৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা, অথবা কাজের
ফাঁকে ১০-১৫ মিনিটের
ছোট ছোট ব্যায়ামও উপকারী। গুরুত্বপূর্ণ
হলো ধারাবাহিকতা।
প্রশ্ন
৩: মানসিক চাপ কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় কী?
উত্তর: মানসিক চাপ কমানোর অনেক
উপায় আছে। সবচেয়ে
সহজ কয়েকটি হলো গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা, পছন্দের গান
শোনা, কিছুক্ষণ প্রকৃতির কাছাকাছি হাঁটা, অথবা প্রিয়জনের সাথে
কথা বলা। আপনার
জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে
তা খুঁজে বের করুন।
প্রশ্ন
৪: প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত?
উত্তর: সাধারণভাবে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস
(২-৩ লিটার) পানি
পান করার পরামর্শ দেওয়া
হয়। তবে
এটি আবহাওয়া, আপনার শারীরিক কার্যকলাপ এবং শারীরিক অবস্থার
ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে
পারে। শরীরে
পানির চাহিদা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো
প্রস্রাবের রঙ দেখা; এটি
হালকা হলুদ বা বর্ণহীন
হওয়া উচিত।
প্রশ্ন
৫: যদি আমি ইতিমধ্যেই কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি, তাহলেও কি এই অভ্যাসগুলো কার্যকর হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই। যদি
আপনি কোনো রোগে আক্রান্ত
হয়ে থাকেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী চিকিৎসার পাশাপাশি এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো
মেনে চললে আপনার সেরে
ওঠার প্রক্রিয়া দ্রুত হতে পারে এবং
সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। তবে
যেকোনো নতুন খাদ্যাভ্যাস বা
ব্যায়াম শুরু করার আগে
আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলে
নেওয়া ভালো।
প্রশ্ন
৬: ফল ও সবজি খাওয়ার সঠিক পরিমাণ কী?
উত্তর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম বা
৫ পরিবেশন ফল ও সবজি
খাওয়া উচিত। বিভিন্ন
রঙের ফল ও সবজি
খেলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
প্রশ্ন
৭: জাঙ্ক ফুড কি পুরোপুরি বর্জন করতে হবে?
উত্তর: স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য জাঙ্ক ফুড
যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো।
তবে মাঝে মাঝে অল্প
পরিমাণে খেলে তেমন বড়
ক্ষতি হয় না, যদি
আপনার বাকি সময়ের খাদ্যাভ্যাস
সুষম থাকে। মূল
বিষয় হলো পরিমিতি ও
ভারসাম্য।
👉 লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅ আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন