জ্বর হলে কী করবেন? ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর কমানোর ১২টি কার্যকরী টিপস | বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ভূমিকা: জ্বর কেন হয় এবং এটি আসলে কী?
আমাদের জীবনে এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কখনো
জ্বর হয়নি। ছোট থেকে বড়, আমরা সবাই এই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত। হঠাৎ করেই
শরীর গরম হয়ে যাওয়া, কাঁপুনি, মাথা ব্যথা, আর সারা শরীরে এক ধরনের ম্যাজম্যাজে অনুভূতি—এই হলো জ্বরেরসাধারণ চিত্র। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই জ্বর আসলে কী? কেনই বা আমাদের
শরীর এমন প্রতিক্রিয়া করে?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, জ্বর কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের
একটি লক্ষণ। আমাদের শরীর যখন কোনো সংক্রমণ বা ইনফেকশনের (যেমন ভাইরাস বা
ব্যাকটেরিয়া) বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এটি শরীরের নিজস্ব
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ, যা আমাদের
শরীরের থার্মোস্ট্যাট হিসেবে কাজ করে, তখন শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যাতে ক্ষতিকর
জীবাণুগুলো সহজে বাঁচতে বা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে।
সুতরাং, জ্বর হওয়া মানে আপনার শরীর তার কাজ ঠিকমতো করছে এবং কোনো
বহিরাগত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে, এই যুদ্ধের সময় শরীর
প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আমাদের প্রয়োজন হয় সঠিক যত্ন ও বিশ্রামের।
বেশিরভাগ সাধারণ জ্বর ঘরোয়া পদ্ধতিতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং কয়েকদিনের
মধ্যেই সেরে ওঠে।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব জ্বর হলে আপনার
করণীয় কী, কীভাবে ঘরোয়া উপায়ে জ্বরের কষ্ট থেকে আরাম পাওয়া যায়,
কখন আপনাকে
অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং জ্বর সংক্রান্ত কিছু সাধারণ ভুল ধারণা
নিয়ে। চলুন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া
যাক।
জ্বরের সাধারণ কারণগুলো কী কী?
জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ
কারণগুলো হলো:
·
ভাইরাল ইনফেকশন: সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা
(ফ্লু), কোভিড-১৯,
ডেঙ্গু,
চিকুনগুনিয়া
ইত্যাদি ভাইরাসজনিত রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর।
·
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: নিউমোনিয়া, টাইফয়েড,
মূত্রনালীর
সংক্রমণ (UTI), টনসিলাইটিস, বা ত্বকের ইনফেকশনের কারণেও জ্বর হতে পারে।
·
টিকা বা ভ্যাকসিনেশন: কিছু টিকা নেওয়ার পর শরীরে
হালকা জ্বর আসা একটি স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটি প্রমাণ করে যে টিকাটি
শরীরে কাজ করতে শুরু করেছে।
·
প্রদাহজনিত রোগ: রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস
বা ক্রোন'স ডিজিজের মতো কিছু অটোইমিউন রোগের কারণেও দীর্ঘমেয়াদী
জ্বর থাকতে পারে।
·
হিট স্ট্রোক: প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘক্ষণ
থাকলে বা শরীরে জলের অভাব হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে, যার একটি লক্ষণ হলো উচ্চ
তাপমাত্রা।
·
কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধ
সেবনের ফলেও জ্বর আসতে পারে।
কারণ যাই হোক না কেন, জ্বরের সময় শরীরকে
সঠিকভাবে যত্ন করা অত্যন্ত জরুরি।
জ্বর হলে কী করবেন? আরাম পাওয়ার কার্যকরী
ঘরোয়া টিপস
সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের ক্ষেত্রে, শরীরকে সুস্থ হওয়ার জন্য
প্রয়োজনীয় পরিবেশ এবং যত্ন প্রদান করাই মূল লক্ষ্য। নিচে এমন কিছু পরীক্ষিত এবং
কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যা আপনাকে জ্বরের সময় দ্রুত
আরাম পেতে সাহায্য করবে।
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরের সেরা ঔষধ
জ্বর হলে আপনার শরীর একটি কঠিন লড়াইয়ে লিপ্ত থাকে। এই সময়
অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে বা ছোটাছুটি করলে শরীরের শক্তি লড়াই করার বদলে অন্য কাজে
ব্যয় হয়, যা আরোগ্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
·
কেন বিশ্রাম জরুরি? বিশ্রামের সময় আমাদের শরীর
সাইটোকাইন নামক প্রোটিন তৈরি করে, যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ঘুমের উন্নতিতে
সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম আপনার ইমিউন সিস্টেমকে (রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা) শক্তিশালী করে তোলে।
·
কীভাবে বিশ্রাম নেবেন? জ্বর অনুভব করার সাথে সাথেই
আপনার দৈনন্দিন কাজ থেকে ছুটি নিন। স্কুল, কলেজ বা অফিসে না গিয়ে বাড়িতে থাকুন। সম্পূর্ণ
বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করুন। দিনের বেলায়ও ঘুমানোর চেষ্টা করুন। শান্ত, অন্ধকার এবং
আরামদায়ক একটি ঘরে থাকুন।
২. হাইড্রেশন বা জলীয় ভারসাম্য রক্ষা করা
জ্বরের সময় শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম থাকে এবং
ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে জল ও ইলেক্ট্রোলাইট হারিয়ে ফেলে। এর ফলে
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল
করে তোলে।
·
কেন হাইড্রেশন গুরুত্বপূর্ণ? পর্যাপ্ত জল
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ
বের করে দেয় এবং কোষগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
·
কী পান করবেন?
o
সাধারণ জল: দিনের বেলায় কিছুক্ষণ পর
পর জল পান করুন। প্রস্রাবের রঙ খেয়াল করুন; যদি এটি হালকা হলুদ বা
স্বচ্ছ হয়, তবে বুঝবেন আপনার শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক আছে।
o
ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS): ঘামের সাথে
শরীর থেকে শুধু জল নয়, সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো জরুরি লবণও বেরিয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত ওআরএস এই ঘাটতি পূরণে
অত্যন্ত কার্যকর। বাড়িতে স্যালাইন না থাকলে এক লিটার ফোটানো ঠান্ডা জলে ৬ চামচ
চিনি ও আধা চামচ লবণ মিশিয়ে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন।
o
ফলের রস: আপেল, কমলা বা মাল্টার রস (চিনি ছাড়া) পান করতে
পারেন। এটি আপনাকে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি ভিটামিন সি-এর জোগান দেবে।
o
স্যুপ ও ঝোল: চিকেন স্যুপ বা সবজির গরম
ঝোল ডিহাইড্রেশন দূর করার পাশাপাশি পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে।
o
হার্বাল চা: আদা চা, তুলসী চা বা
পুদিনা চা গলা ব্যথা কমাতে এবং শরীরকে আরাম দিতে সাহায্য করে।
৩. শরীরকে ঠান্ডা রাখা (সঠিক উপায়ে)
জ্বরের সময় শরীর গরম থাকলেও কাঁপুনি হতে পারে, যার ফলে আমরা
মোটা কাঁথা বা কম্বল জড়িয়ে ফেলি। এটি একটি বড় ভুল। শরীরকে অতিরিক্ত ঢেকে রাখলে
তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।
·
কীভাবে শরীর ঠান্ডা রাখবেন?
o
হালকা পোশাক পরুন: সুতির হালকা এবং ঢিলেঢালা
পোশাক পরুন। এতে শরীরে বাতাস চলাচল করতে পারবে।
o
জলপট্টি বা স্পঞ্জিং: এটি জ্বর কমানোর একটি
অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। একটি পাত্রে সাধারণ বা সামান্য উষ্ণ জল (কখনোই বরফ ঠান্ডা
জল নয়) নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় বা স্পঞ্জ সেই জলে ভিজিয়ে ভালো করে চিপে নিন।
এরপর সেই কাপড় দিয়ে কপাল, ঘাড়, বগল এবং কুঁচকির মতো স্থানগুলো আলতো করে মুছে দিন। এই
জায়গাগুলোতে রক্তনালী ত্বকের খুব কাছে থাকে, ফলে শরীর দ্রুত ঠান্ডা হয়।
o
ঠান্ডা জলে স্পঞ্জিং কেন করবেন না? বরফ ঠান্ডা জল
ব্যবহার করলে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং কাঁপুনি শুরু হতে পারে, যা শরীরের
অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৪. পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ
জ্বরের সময় সাধারণত আমাদের খাওয়ার রুচি থাকে না। কিন্তু
শরীরের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তির প্রয়োজন, আর সেই শক্তি
আসে খাবার থেকে। তাই একেবারে না খেয়ে থাকা যাবে না।
- কী খাবেন?
o সহজপাচ্য
খাবার: জাউ ভাত, নরম খিচুড়ি, সিদ্ধ সবজি, দই ইত্যাদি হজম করা সহজ।
o প্রোটিন সমৃদ্ধ
খাবার: চিকেন স্যুপ, সিদ্ধ ডিম বা মাছের হালকা ঝোল শরীরের ক্ষয়
পূরণে সাহায্য করে।
o ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ ফল: কমলা, লেবু, পেয়ারা, আমলকী ইত্যাদি ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- কী
এড়িয়ে চলবেন?
o ভাজা-পোড়া,
তৈলাক্ত এবং
মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো হজম করতে শরীরের অতিরিক্ত শক্তি খরচ হয়।
o প্রক্রিয়াজাত
খাবার, ঠান্ডা পানীয়
এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
৫. ভেষজ প্রতিকার: প্রকৃতির ছোঁয়ায় আরাম
কিছু ভেষজ উপাদান রয়েছে যা জ্বরের সময় আরাম দিতে পারে।
তবে মনে রাখবেন, এগুলো সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কাজ করে, মূল চিকিৎসা হিসেবে নয়।
·
তুলসী: তুলসী পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল
এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কয়েকটা তুলসী পাতা এক কাপ জলে ফুটিয়ে
সেই জল পান করলে উপকার পাওয়া যায়। এটি গলা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
·
আদা: আদাতে থাকা জিঞ্জেরল নামক উপাদান প্রদাহ কমাতে
এবং বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। আদা কুচি করে গরম জলে ফুটিয়ে মধু ও লেবুর
রস মিশিয়ে পান করলে আরাম পাবেন।
·
রসুন: রসুনে থাকা অ্যালিসিন নামক যৌগ জীবাণুনাশক
হিসেবে কাজ করে। গরম স্যুপে কয়েক কোয়া রসুন থেঁতো করে মিশিয়ে খেলে উপকার হতে
পারে।
·
পুদিনা: পুদিনা পাতা শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে।
গরম জলে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে সেই চা পান করতে পারেন।
৬. লবণ জলে গার্গল করা
জ্বরের সাথে যদি গলা ব্যথা থাকে, তাহলে লবণ জলে গার্গল করা
একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি।
- কীভাবে
করবেন? এক গ্লাস হালকা গরম জলে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন।
এই জল দিয়ে দিনে ২-৩ বার গার্গল করুন। লবণ জল গলার ভেতরের প্রদাহ এবং ফোলা
কমাতে সাহায্য করে।
৭. ঔষধের সঠিক ব্যবহার (প্রয়োজনে)
যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর নিয়ন্ত্রণে না আসে বা তাপমাত্রা
অনেক বেশি থাকে (সাধারণত ১০১° ফারেনহাইটের উপরে), তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা
যেতে পারে।
·
প্যারাসিটামল: জ্বর কমানোর জন্য সবচেয়ে
নিরাপদ এবং বহুল ব্যবহৃত ঔষধ হলো প্যারাসিটামল। তবে এর ডোজ অবশ্যই বয়স এবং ওজন
অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডোজের বেশি ঔষধ
খাবেন না। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) প্যারাসিটামল
ব্যবহারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত দুটি ৫০০ মিলিগ্রাম
ট্যাবলেটের মধ্যে ৪-৬ ঘণ্টার ব্যবধান রাখা উচিত।
·
অন্যান্য ঔষধ: আইবুপ্রোফেন বা অন্যান্য NSAID
জাতীয় ঔষধও
জ্বর কমায়, তবে এগুলো সবার জন্য উপযুক্ত নয়, বিশেষ করে যাদের পেটের
সমস্যা বা ডেঙ্গুর লক্ষণ আছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধগুলো গ্রহণ করা
থেকে বিরত থাকুন।
·
অ্যান্টিবায়োটিক: মনে রাখবেন, অ্যান্টিবায়োটিক
শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাল জ্বরে এর কোনো
ভূমিকা নেই। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু
করবেন না। এটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মতো ভয়াবহ সমস্যা তৈরি করতে পারে।
জ্বর হলে কী কী করা একেবারেই উচিত নয়?
কিছু সাধারণ ভুল আমাদের অসুস্থতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে
পারে। জ্বর হলে নিচের কাজগুলো এড়িয়ে চলুন:
·
অ্যালকোহল গ্রহণ: অ্যালকোহল শরীরকে
ডিহাইড্রেটেড করে তোলে, যা জ্বরের সময় খুবই ক্ষতিকর।
·
ভারী কম্বল বা কাঁথা ব্যবহার: কাঁপুনি হলেও
মোটা কাঁথা দিয়ে শরীর ঢেকে রাখবেন না। এতে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
·
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা বা কফি শরীরকে
ডিহাইড্রেটেড করতে পারে। এর বদলে হার্বাল চা পান করুন।
·
নিজের ইচ্ছামতো ঔষধ খাওয়া: ভুল ঔষধ বা ভুল ডোজে ঔষধ
সেবন মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
·
অসুস্থ অবস্থায় বাইরে যাওয়া: এতে আপনার
নিজের কষ্ট বাড়বে এবং অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
কখন আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে?
সাধারণ জ্বর ৩-৪ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু কিছু লক্ষণ
দেখলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো কোনো গুরুতর
সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে:
·
জ্বরের তাপমাত্রা যদি ১০৩° ফারেনহাইট (৩৯.৪° সেলসিয়াস) বা
তার বেশি হয়।
·
জ্বর যদি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
·
তীব্র মাথা ব্যথা, যা সাধারণ ঔষধে কমছে না।
·
শরীরে বা ত্বকে কোনো ধরনের র্যাশ বা লালচে দাগ দেখা দিলে
(এটি ডেঙ্গু বা অন্য কোনো মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে)।
·
আলোর দিকে তাকাতে তীব্র কষ্ট হলে বা ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে।
·
শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে।
·
বারবার বমি হলে।
·
প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হলে।
·
মানসিক বিভ্রান্তি, অস্বাভাবিক আচরণ বা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব দেখা দিলে।
শিশুদের ক্ষেত্রে (বিশেষ মনোযোগ দিন):
শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর নিয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
·
৩ মাসের কম বয়সী শিশুর যেকোনো মাত্রার জ্বর একটি
জরুরি অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
·
৩ থেকে ৩৬ মাসের শিশুর জ্বর যদি ১০২° ফারেনহাইট
(৩৮.৯° সেলসিয়াস) বা
তার বেশি হয়।
·
জ্বরের সাথে শিশু যদি অস্বাভাবিকভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ে,
খেতে না চায়
বা একটানা কাঁদতে থাকে।
·
জ্বরের সাথে খিঁচুনি হলে।
·
ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ, যেমন - মুখ শুকিয়ে যাওয়া,
কান্নার সময়
চোখে জল না আসা, বা ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে একবারও প্রস্রাব না করা।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) এই বিপদ
চিহ্নগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
উপসংহার
জ্বর আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া
এবং বেশিরভাগ সময় এটি গুরুতর কিছু নয়। সঠিক যত্ন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং প্রচুর
পরিমাণে তরল গ্রহণ করলে সাধারণ জ্বর কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। ঘরোয়া
পদ্ধতিগুলো জ্বরের সময় আপনাকে আরাম দিতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে।
তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের শরীরের কথা শোনা। যদি আপনার
মনে হয় জ্বর সাধারণ নয় বা উপরে উল্লিখিত বিপদ চিহ্নগুলোর কোনো একটিও প্রকাশ পায়,
তবে
বিন্দুমাত্র দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে
সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করাই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি। নিজের এবং পরিবারের যত্ন নিন,
সুস্থ থাকুন।
সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর (FAQ Section)
প্রশ্ন ১: জ্বর কমানোর সবচেয়ে দ্রুত উপায় কী?
উত্তর: চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজে প্যারাসিটামল সেবন করা এবং এর পাশাপাশি কপাল ও শরীরে
জলপট্টি (সাধারণ তাপমাত্রার জল দিয়ে) দেওয়া জ্বর কমানোর সবচেয়ে দ্রুত ও কার্যকর
উপায়।
প্রশ্ন ২: জ্বরের সময় কি গোসল করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই যাবে।
হালকা গরম জলে গোসল করলে শরীর পরিষ্কার থাকে এবং আরাম লাগে। তবে ঠান্ডা জলে গোসল
করা বা দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করা উচিত নয়।
প্রশ্ন ৩: জ্বর হলে কি ডিম বা দুধ খাওয়া যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, খাওয়া যাবে।
ডিম একটি উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সাহায্য করে। সিদ্ধ ডিম
খাওয়া সবচেয়ে ভালো। দুধও একটি পুষ্টিকর খাবার। যদি হজমে সমস্যা না হয়, তাহলে দুধ বা
দুধের তৈরি খাবার খেতে কোনো বাধা নেই।
প্রশ্ন ৪: কত ডিগ্রি জ্বর হলে তাকে উচ্চ তাপমাত্রা বলা হয়?
উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কদের
ক্ষেত্রে, মৌখিক তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইট (৩৮° সেলসিয়াস) বা
তার বেশি হলে তাকে জ্বর হিসেবে ধরা হয়। ১০৩° ফারেনহাইট (৩৯.৪° সেলসিয়াস) বা
তার বেশি তাপমাত্রাকে উচ্চ জ্বর বলা হয় এবং এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উচিত।
প্রশ্ন ৫: ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর: ডেঙ্গু জ্বরের
সাধারণ লক্ষণগুলো হলো - তীব্র জ্বর (১০৪-১০৫° ফারেনহাইট), প্রচণ্ড মাথা
ব্যথা (বিশেষ করে চোখের পেছনে), গা-হাত-পায়ে এবং হাড়ে তীব্র ব্যথা (ব্রেকবোন ফিভার),
বমি বমি ভাব
এবং শরীরে র্যাশ ওঠা। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে রক্ত পরীক্ষা করান এবং
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র
তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা। যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য, বিশেষ করে
জ্বরের ক্ষেত্রে, চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের
পরামর্শ নিন। এই লেখাটি কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।
👉 🙏🙏 লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅ আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন