ওজন কমাতে ১৫ মিনিটের ফ্যাট বার্নিং ওয়ার্কআউট (সম্পূর্ণ গাইড) | বাড়িতেই করুন
মাত্র ১৫ মিনিটে ঝরবে মেদ! বাড়িতেই করুন এই শক্তিশালী ফ্যাট বার্নিং
ওয়ার্কআউট (সম্পূর্ণ গাইড)
ব্যস্ত জীবনে আমরা সবাই সময়ের অভাবে ভুগছি। জিমে যাওয়ার
জন্য লম্বা সময় বের করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করা অনেকের জন্যই প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু তার মানে কি এই যে, ফিট থাকার স্বপ্ন বা ওজন কমানোর ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যাবে?
একদমই না!
যদি আমি বলি, আপনার ব্যস্ত রুটিন থেকে প্রতিদিন মাত্র ১৫
মিনিট সময় বের করেই আপনি পেতে পারেন এক অবিশ্বাস্য ফ্যাট বার্নিং ফলাফল? হ্যাঁ, আপনি ঠিকই
শুনেছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব এমন একটি শক্তিশালী "ওজন কমাতে
১৫ মিনিটের ফ্যাট বার্নিং ওয়ার্কআউট" নিয়ে, যা আপনার শরীরকে একটি ফ্যাট
বার্নিং মেশিনে পরিণত করতে পারে।
এই সম্পূর্ণ গাইডটি শুধুমাত্র ব্যায়ামের একটি তালিকা নয়,
বরং এর পেছনের
বিজ্ঞান, সঠিক পদ্ধতি, ডায়েট টিপস এবং মোটিভেশন ধরে রাখার উপায় নিয়ে
একটি বিস্তারিত আলোচনা। চলুন, আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
কেন ১৫ মিনিটের ওয়ার্কআউট এত কার্যকর? এর পেছনের বিজ্ঞান
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, "যেখানে মানুষ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে ঘাম ঝরিয়েও ওজন কমাতে পারে না, সেখানে মাত্র ১৫ মিনিটের
ব্যায়ামে কীভাবে সম্ভব?" এর উত্তর লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের মধ্যে, বিশেষ করে HIIT
(High-Intensity Interval Training) নামক এক বিশেষ ধরনের ব্যায়াম পদ্ধতির মধ্যে।
আমাদের এই ১৫ মিনিটের ওয়ার্কআউটটি HIIT নীতির উপর
ভিত্তি করে তৈরি।
HIIT কী?
HIIT হলো এমন একটি
কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম কৌশল যেখানে আপনি অল্প সময়ের জন্য খুব তীব্রভাবে
ব্যায়াম করেন এবং তারপরে একটি ছোট বিরতি নেন বা খুব হালকা গতিতে ব্যায়াম করেন।
এই চক্রটির পুনরাবৃত্তি করা হয়।
কীভাবে এটি
ফ্যাট বার্ন করে?
১. অক্সিজেনের ঘাটতি এবং আফটারবার্ন এফেক্ট (EPOC): যখন আপনি খুব
তীব্রভাবে ব্যায়াম করেন, তখন আপনার শরীর যে পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করে, তার চেয়ে বেশি
অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এই ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যায়াম শেষ হওয়ার পরেও আপনার
শরীর অতিরিক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় Excess
Post-exercise Oxygen Consumption (EPOC) বা আফটারবার্ন এফেক্ট। এর
ফলে, আপনার
ওয়ার্কআউট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আপনার শরীর
ক্যালোরি এবং ফ্যাট বার্ন করতে থাকে। আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজের একটি গবেষণা অনুযায়ী, HIIT সাধারণ কার্ডিওর চেয়ে অনেক
বেশি কার্যকরভাবে EPOC বাড়াতে পারে।
২. মেটাবলিজম বৃদ্ধি: HIIT আপনার মেটাবলিক রেট বা
বিপাক হারকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। একটি দ্রুত মেটাবলিজম মানে আপনার শরীর বিশ্রামের
সময়ও বেশি ক্যালোরি পোড়াবে। এই ১৫ মিনিটের তীব্র ওয়ার্কআউট আপনার মেটাবলিজমকে
সারাদিনের জন্য চাঙ্গা করে তোলে।
৩. হরমোনের ইতিবাচক পরিবর্তন: তীব্র ব্যায়াম আমাদের
শরীরে গ্রোথ হরমোন (HGH) এবং অ্যাড্রেনালিনের মতো ফ্যাট-বার্নিং হরমোনের উৎপাদন
বাড়ায়। এই হরমোনগুলো ফ্যাট সেলগুলোকে ভেঙে এনার্জি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য
করে।
৪. সময় সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক: সবচেয়ে বড়
সুবিধা হলো এটি সময় সাশ্রয়ী। আপনার জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, দামী
যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। বাড়ির যেকোনো কোণে আপনি এই ওয়ার্কআউটটি করতে পারেন,
যা আপনাকে
ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ওয়ার্কআউট
শুরু করার আগে: প্রস্তুতি পর্ব
যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া
অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনাকে সেরা ফলাফল পেতে এবং সম্ভাব্য আঘাত থেকে রক্ষা করতে
সাহায্য করবে।
১. সঠিক পোশাক এবং স্থান নির্বাচন
·
পোশাক: আরামদায়ক, হালকা এবং
শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য পোশাক পরুন। যে পোশাকে আপনার শরীরচর্চা করতে সুবিধা হয়।
·
জুতো: ভালো গ্রিপযুক্ত একজোড়া স্পোর্টস শু বা ট্রেনিং
শু পরা আবশ্যক। এটি আপনার পা এবং জয়েন্টকে সাপোর্ট দেবে।
·
স্থান: আপনার বাড়িতে এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখানে
আপনি আরামে হাত-পা ছড়িয়ে ব্যায়াম করতে পারবেন। জায়গাটি যেন সমতল এবং পরিষ্কার
থাকে।
২. ওয়ার্ম-আপ (Warm-up) এর গুরুত্ব (৩ মিনিট)
সরাসরি তীব্র ব্যায়ামে ঝাঁপিয়ে পড়া আপনার পেশী এবং
জয়েন্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ওয়ার্কআউট শুরুর আগে শরীরকে প্রস্তুত করার
জন্য ওয়ার্ম-আপ অপরিহার্য। এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন
উন্নত করে এবং পেশীগুলোকে নমনীয় করে তোলে।
কীভাবে করবেন?
·
স্পট জগিং (Spot Jogging): ৩০ সেকেন্ড এক জায়গায়
দাঁড়িয়ে হালকাভাবে দৌড়ান।
·
জাম্পিং জ্যাকস (Jumping Jacks): ৩০ সেকেন্ড ধরে
করুন।
·
আর্ম সার্কেল (Arm Circles): হাত দুটোকে
সামনে এবং পেছনে ৩০ সেকেন্ড করে ঘোরান।
·
লেগ সুইং (Leg Swings): একটি দেয়াল বা চেয়ার ধরে
দাঁড়িয়ে পা-কে সামনে-পেছনে এবং পাশে ৩০ সেকেন্ড দোলান।
·
ডাইনামিক স্ট্রেচ (Dynamic Stretches): যেমন হাঁটু
উঁচু করে হাঁটা (High Knees) বা হিপ সার্কেল (Hip Circles) ৩০ সেকেন্ড করুন।
মূল ওয়ার্কআউট
রুটিন: ১৫ মিনিটের ফ্যাট বার্নিং ম্যাজিক (১০ মিনিট)
এখন আমরা মূল পর্বে প্রবেশ করব। এই ওয়ার্কআউটটিতে মোট ৫টি
ব্যায়াম রয়েছে। আমরা প্রতিটি ব্যায়াম ৪৫ সেকেন্ড ধরে করব এবং
তারপরে ১৫ সেকেন্ড বিশ্রাম নেব। এই ৫টি
ব্যায়ামের সার্কিটটি আমরা দুইবার পুনরাবৃত্তি করব। এতে মোট সময় লাগবে (৪৫+১৫) x
৫ x ২ = ৬০০
সেকেন্ড বা ১০ মিনিট।
আপনার মোবাইলে একটি টাইমার সেট করে নিন।
সার্কিট ১ এবং ২
ব্যায়াম ১:
হাই নীজ (High Knees)
·
সময়: ৪৫ সেকেন্ড
·
বিশ্রাম: ১৫ সেকেন্ড
সঠিক পদ্ধতি:
১. সোজা হয়ে
দাঁড়ান, পা দুটো সামান্য ফাঁকা রাখুন।
২. এবার এক
জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়ানোর মতো করে আপনার ডান হাঁটুটি বুকের যতটা সম্ভব কাছে
আনার চেষ্টা করুন।
৩. সাথে সাথে
ডান পা নামিয়ে বাম হাঁটুটি উপরে তুলুন।
৪. এই
প্রক্রিয়াটি দ্রুত গতিতে করতে থাকুন। আপনার হাত দুটোও দৌড়ানোর ভঙ্গিমায়
ছন্দবদ্ধভাবে নাড়াচাড়া করুন। কোর বা পেটের পেশী শক্ত রাখুন।
সাধারণ ভুল: সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া বা
পিঠ বাঁকা করা।
সহজ ভার্সন: গতি কমিয়ে দিন। লাফানোর
পরিবর্তে মার্চ করার মতো করে করুন।
ব্যায়াম ২:
বডিওয়েট স্কোয়াট (Bodyweight Squats)
·
সময়: ৪৫ সেকেন্ড
·
বিশ্রাম: ১৫ সেকেন্ড
সঠিক পদ্ধতি:
১. পা দুটো
কাঁধের সমান বা তার থেকে সামান্য বেশি ফাঁকা করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। পায়ের
আঙুলগুলো সামান্য বাইরের দিকে থাকবে।
২. বুক সোজা
রেখে এবং পিঠ সোজা রেখে ধীরে ধীরে আপনার নিতম্বকে পেছনের দিকে এবং নিচের দিকে
নামাতে থাকুন, যেন আপনি একটি অদৃশ্য চেয়ারে বসছেন।
৩. আপনার উরু
বা থাই মেঝের সমান্তরাল না হওয়া পর্যন্ত নিচে নামুন। খেয়াল রাখবেন আপনার হাঁটু
যেন পায়ের আঙুলের থেকে বেশি সামনে না চলে যায়।
৪. গোড়ালিতে
ভর দিয়ে উপরের দিকে উঠে আগের পজিশনে ফিরে আসুন।
সাধারণ ভুল: হাঁটু ভেতরের দিকে নিয়ে
আসা, পিঠ গোল করে
ফেলা।
কঠিন ভার্সন: স্কোয়াট করার পর উপরে ওঠার
সময় একটি লাফ দিন (Jump Squat)।
ব্যায়াম ৩:
পুশ-আপ (Push-ups)
·
সময়: ৪৫ সেকেন্ড
·
বিশ্রাম: ১৫ সেকেন্ড
সঠিক পদ্ধতি:
১. উপুড় হয়ে
হাতের তালু এবং পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে শরীরকে একটি সরলরেখায় রাখুন। হাত দুটো
কাঁধের থেকে সামান্য চওড়া থাকবে।
২. এবার কনুই
ভাঁজ করে আপনার বুককে মেঝের কাছাকাছি নিয়ে আসুন। শরীর মাথা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত
সোজা থাকবে।
৩. এরপর হাতে
চাপ দিয়ে শরীরকে উপরে তুলে আগের অবস্থানে ফিরে যান।
সাধারণ ভুল: নিতম্ব ঝুলে পড়া বা
অতিরিক্ত উপরে তুলে রাখা।
সহজ ভার্সন: হাঁটুর উপর ভর দিয়ে করুন (Knee
Push-up) অথবা দেয়ালের
বিপরীতে দাঁড়িয়ে ওয়াল পুশ-আপ করুন।
ব্যায়াম ৪:
মাউন্টেন ক্লাইম্বার (Mountain Climbers)
·
সময়: ৪৫ সেকেন্ড
·
বিশ্রাম: ১৫ সেকেন্ড
সঠিক পদ্ধতি:
১. পুশ-আপের
মতো হাই প্ল্যাঙ্ক পজিশনে আসুন। আপনার শরীর মাথা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত একটি
সরলরেখায় থাকবে।
২. এবার আপনার
ডান হাঁটুটি ভাঁজ করে দ্রুত বুকের দিকে নিয়ে আসুন এবং আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে
নিন।
৩. সাথে সাথেই
বাম হাঁটুটি বুকের দিকে আনুন।
৪. এই
প্রক্রিয়াটি দ্রুত গতিতে পুনরাবৃত্তি করুন, যেন আপনি এক জায়গায়
দৌড়াচ্ছেন। কোর পেশী শক্ত রাখুন।
সাধারণ ভুল: নিতম্বকে উপরে তুলে রাখা,
গতিতে
ধারাবাহিকতা না থাকা।
সহজ ভার্সন: গতি কমিয়ে দিন এবং
নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রতিটি পা চালান।
ব্যায়াম ৫:
বার্পিস (Burpees)
·
সময়: ৪৫ সেকেন্ড
·
বিশ্রাম: ১৫ সেকেন্ড (প্রথম সার্কিট শেষে)
সঠিক পদ্ধতি:
১. সোজা হয়ে
দাঁড়ান।
২. স্কোয়াট
পজিশনে আসুন এবং আপনার হাতের তালু কাঁধ বরাবর মেঝেতে রাখুন।
৩. লাফ দিয়ে
পা দুটোকে পেছনে নিয়ে গিয়ে পুশ-আপ বা প্ল্যাঙ্ক পজিশনে আসুন।
৪. একটি পুশ-আপ
করুন (ঐচ্ছিক, তবে করলে বেশি ক্যালোরি বার্ন হবে)।
৫. লাফ দিয়ে
পা দুটোকে আবার হাতের কাছে নিয়ে আসুন।
৬. সবশেষে
শক্তি দিয়ে সোজা উপরের দিকে লাফ দিন এবং হাত দুটো মাথার উপরে তুলুন।
৭. মাটিতে নেমে
আবার পুনরাবৃত্তি করুন।
সাধারণ ভুল: প্রতিটি ধাপ খুব তাড়াহুড়ো
করে ভুলভাবে করা।
সহজ ভার্সন: পুশ-আপ এবং লাফ বাদ দিন।
ধাপগুলো ধীরে ধীরে করুন।
প্রথম সার্কিট
শেষ! এবার ১ মিনিট বিশ্রাম নিন এবং পুরো সার্কিটটি আরেকবার পুনরাবৃত্তি করুন।
কুল-ডাউন (Cool-down)
পর্ব (২ মিনিট)
তীব্র ব্যায়ামের পর হঠাৎ করে থেমে যাওয়া ঠিক নয়।
কুল-ডাউন আপনার হার্ট রেটকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে এবং পেশীর
ব্যথা বা টান লাগার সম্ভাবনা কমায়।
কীভাবে করবেন?
·
হালকা জগিং বা হাঁটা: ৩০ সেকেন্ড ধরে খুব ধীরে
হাঁটুন বা জগিং করুন।
·
কোয়াড স্ট্রেচ (Quad Stretch): দেয়াল ধরে
দাঁড়িয়ে ডান পা ভাঁজ করে গোড়ালি নিতম্বের কাছে আনুন এবং হাত দিয়ে ধরে রাখুন।
৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে অন্য পায়ে করুন।
·
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ (Hamstring Stretch): মাটিতে বসে পা
দুটো সামনে ছড়িয়ে দিন। এবার ধীরে ধীরে শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে
পায়ের আঙুল স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
·
চাইল্ডস পোজ (Child's Pose): মাটিতে হাঁটু
গেড়ে বসুন এবং শরীরকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কপাল মেঝেতে ঠেকান। হাত দুটো সামনে
প্রসারিত রাখুন। ৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকুন।
ফলাফল দ্বিগুণ
করার উপায়: শুধু ওয়ার্কআউটই সব নয়
এই "ওজন কমাতে ১৫ মিনিটের ফ্যাট বার্নিং
ওয়ার্কআউট" নিঃসন্দেহে শক্তিশালী, কিন্তু সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে হলে আপনাকে
জীবনযাত্রার অন্যান্য দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
১. পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট
ব্যায়াম ওজন কমানোর যাত্রার ৩০% হলে, বাকি ৭০% হলো
আপনার ডায়েট।
·
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: আপনার খাদ্যতালিকায়
পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন (ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, ডাল, পনির, টোফু) রাখুন। প্রোটিন পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং
দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
·
ফাইবার যুক্ত খাবার: ফল, শাকসবজি, শস্য জাতীয়
খাবারে প্রচুর ফাইবার থাকে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত
রাখে।
·
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েলের
মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করুন।
·
প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনি পরিহার করুন: প্যাকেটজাত
খাবার, ফাস্ট ফুড,
কোমল পানীয়,
মিষ্টি জাতীয়
খাবার থেকে দূরে থাকুন। এগুলো খালি ক্যালোরি ছাড়া আর কিছুই নয়।
·
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে,
একটি
স্বাস্থ্যকর ডায়েটে ফল, সবজি, লেগিউম, বাদাম এবং পূর্ণ শস্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আরও জানতে
তাদের স্বাস্থ্যকর ডায়েট সংক্রান্ত নির্দেশিকা পড়তে পারেন।
২. পর্যাপ্ত জলপান
সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। জল আপনার
মেটাবলিজমকে সক্রিয় রাখে, শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং আপনাকে সতেজ রাখে।
ব্যায়ামের আগে, মাঝে এবং পরেও জল পান করা জরুরি।
৩. বিশ্রাম এবং ঘুম
ওজন কমানোর জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
ঘুমের সময় আমাদের শরীর পেশী মেরামত করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার ক্ষুধা
বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭-৯
ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
৪. ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
যেকোনো কিছুর চাবিকাঠি হলো ধারাবাহিকতা। সপ্তাহে অন্তত ৩
থেকে ৫ দিন এই ১৫ মিনিটের ওয়ার্কআউটটি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। প্রথম দিকে
হয়তো কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরেই আপনি দেখবেন এটি আপনার অভ্যাসে
পরিণত হয়েছে এবং আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং উদ্যমী অনুভব করছেন।
উপসংহার
সময়ের অভাব এখন আর আপনার ফিটনেস যাত্রার পথে বাধা হতে পারে
না। "ওজন কমাতে ১৫ মিনিটের ফ্যাট বার্নিং ওয়ার্কআউট" একটি
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এবং অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি যা আপনাকে অল্প সময়েই
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন, এই ওয়ার্কআউটের সাথে একটি
সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম যুক্ত হলে আপনি দ্রুত এবং স্থায়ী ফলাফল
দেখতে পাবেন।
তাই আর অপেক্ষা কেন? আজ থেকেই আপনার জীবনের এই
১৫ মিনিট নিজের জন্য বিনিয়োগ করুন এবং একটি স্বাস্থ্যকর, ফিট এবং আত্মবিশ্বাসী
জীবনের দিকে এগিয়ে যান। আপনার যাত্রা শুরু হোক আজ থেকেই!
সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর (FAQ Section)
প্রশ্ন ১: আমি কি প্রতিদিন এই ওয়ার্কআউটটি করতে পারি?
উত্তর: শুরুতে সপ্তাহে
৩-৪ দিন করার চেষ্টা করুন। আপনার শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেলে এবং আপনি শক্তিশালী অনুভব
করলে সপ্তাহে ৫ দিন করতে পারেন। HIIT ওয়ার্কআউট বেশ তীব্র হওয়ায় শরীরকে রিকভারির
জন্য সময় দেওয়া জরুরি। তাই সপ্তাহে অন্তত ১-২ দিন বিশ্রাম নিন।
প্রশ্ন ২: এই ওয়ার্কআউট করার জন্য কি কোনো যন্ত্রপাতির
প্রয়োজন আছে?
উত্তর: না, এই
ওয়ার্কআউটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সম্পূর্ণ বডিওয়েট ব্যায়াম। আপনার কোনো
বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। শুধু একটি যোগা ম্যাট বা নরম কোনো পৃষ্ঠ ব্যবহার
করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩: আমি কত দিনের মধ্যে ফলাফল দেখতে পাব?
উত্তর: ফলাফল
ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় এবং এটি আপনার ডায়েট, ঘুমের অভ্যাস এবং
জেনেটিক্সের উপরও নির্ভর করে। তবে আপনি যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন এবং সঠিক
ডায়েট অনুসরণ করেন, তাহলে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই নিজের শরীরে ইতিবাচক
পরিবর্তন (যেমন শক্তি বৃদ্ধি, ফিটনেসে উন্নতি এবং সামান্য ওজন হ্রাস) লক্ষ্য করতে শুরু
করবেন।
প্রশ্ন ৪: আমি যদি সম্পূর্ণ বিগিনার হই, তাহলেও কি এই
ওয়ার্কআউট করতে পারব?
উত্তর: হ্যাঁ, পারবেন।
প্রতিটি ব্যায়ামের "সহজ ভার্সন" উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি সেই
ভার্সনগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন। সময়ের সাথে সাথে শক্তি বাড়লে ধীরে ধীরে মূল
ব্যায়ামে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। সবসময় নিজের শরীরের কথা শুনুন এবং ক্ষমতার বাইরে
কিছু করবেন না।
প্রশ্ন ৫: কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যায়াম করতে যদি আমার খুব
কষ্ট হয়, তাহলে কী করব?
উত্তর: যদি কোনো
ব্যায়াম করতে আপনার ব্যথা হয় বা খুব বেশি কষ্ট হয়, তাহলে সেটি জোর করে করবেন
না। আপনি সেই ব্যায়ামটি বাদ দিয়ে তার জায়গায় অন্য কোনো সহজ ব্যায়াম (যেমন
জাম্পিং জ্যাকস বা স্পট জগিং) করতে পারেন অথবা সেই সময়টা বিশ্রাম নিতে পারেন। মূল
লক্ষ্য হলো হার্ট রেট বাড়ানো।
প্রশ্ন ৬: শুধু এই ব্যায়াম করে কি ওজন কমানো সম্ভব,
যদি আমি ডায়েট
কন্ট্রোল না করি?
উত্তর: যদিও এই
ব্যায়ামটি ক্যালোরি বার্ন করতে অত্যন্ত কার্যকর, শুধুমাত্র ব্যায়ামের
মাধ্যমে ওজন কমানো বেশ কঠিন। একটি প্রবাদ আছে, "You can't
out-exercise a bad diet"। অর্থাৎ, আপনি খারাপ খাদ্যাভ্যাসের ক্ষতি শুধু ব্যায়াম দিয়ে পূরণ
করতে পারবেন না। সেরা এবং স্থায়ী ফলাফলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং
ব্যায়ামের সমন্বয় অপরিহার্য।
👉 🙏🙏 লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅ আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন